করোনায় বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়, অনলাইনে পড়াচ্ছেন চীনা শিক্ষকরা

অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাও

করোনাভাইরাস-কোভিড-১৯ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ায় নির্দিষ্ট ছুটির পরও নিয়মিত কার্যক্রম শুরু হয়নি চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে।

উপরন্ত অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম ফেব্রুয়ারি কিংবা মার্চ এবং কোন কোন ক্ষেত্রে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। কবে নাগাদ চালু হবে বা বাংলাদেশসহ বিদেশি শিক্ষার্থীরা কখন চীনে ফিরে যাবে তা নিয়ে কোন নির্দিষ্ট তথ্য দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

তবে এই ঘাটতি পুষিয়ে নিতে অনলাইনে চলছে পাঠদান। দেশ বিদেশের শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই অংশ নিচ্ছে তাদের বিভিন্ন কোর্সের ক্লাসগুলোতে। তাই চীনে অনেক কাজ থমকে থাকলেও বন্ধ নেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠদান কার্যক্রম।

Travelion – Mobile

জানুয়ারির শেষদিকে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছিল অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলি ব্যবহার করে চীনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পাঠদান অব্যাহত রাখবে। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পুনরায় সেমিস্টার কার্যক্রম শুরু না হওয়া পর্যন্ত এমন শিক্ষাদান পদ্ধতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় তারা।

চীনের বেইজিং নরমাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাফাত বিন মাহমুদ বলেন,“করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাসে তাদের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে। কোন শিক্ষার্থীকে আগেভাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নোটিশ ছাড়া ক্যাম্পাসে আসতে নিষেধ করেছে কর্তৃপক্ষ। তাই আমরা যারা শীতকালীন ছুটি কাটাতে নিজ নিজ দেশে চলে এসেছি তাদের মধ্যে উৎকন্ঠা ছিল কিভাবে সেমিস্টার শেষ করব। তবে আমাদের সব আশংকাকে দূর করে দিয়ে অনলাইনে ক্লাস নেয়ার ঘোষণায় সস্তি ফিরে পেয়েছি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে শ্রেণীকক্ষে বসে শিক্ষার্থদের পড়াশুনা শেষ করার কোন সুযোগ না থাকায় এই বিকল্প সমাধান খুঁজে বের করতে হয়েছে চীন সরকারকে। এমন উদ্যেগকে সাধুবাদ জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।


সাউথ চায়না মর্ণিং পোষ্ট পত্রিকায় জু ইউটিং নামে এক চীনা শিক্ষার্থী জানায়, “নববর্ষের ছুটি শেষ হলেও করোভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে স্কুল সেমেস্টার কার্যক্রম পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের সকলকেই বাড়িতে থাকতে বলা হচ্ছে। তবে এ অবস্থায় শুধুমাত্র বাড়িতে বসেই আমরা আমাদের পাঠদানে অংশ নিতে পারছি। এটি একটি অসাধারণ ব্যাপার।”

উহানের সেন্ট্রাল চায়না বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আকিব ইরফানও বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, “বর্তমান প্রেক্ষাপটে যাতে আমাদের সেমিস্টার কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য তারা অনলাইনে ক্লাস শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে। এজন্য আমাদের ওয়েইসি নামে একটি অ্যাপস ব্যবহার করতে হচ্ছে। এর মাধ্যমে আমরা প্রতিদিন নিয়মতিভাবে পাঠদান কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছি। এতে যারা যারা ক্লাসে আছে সবাই অংশ নিয়ে শিক্ষকের লেকচার শুনতে পারে। এক্ষেত্রে শিক্ষক সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে রেনডমলি প্রশ্ন করে থাকেন।”

এই অ্যাপসের অনলাইন পাঠদানে খুব একটা সমস্যা না হলেও বাংলাদেশের সময় থেকে চীন দুই ঘন্টা এগিয়ে থাকায় সকালে ঘুম থেকে উঠাটা একটু কষ্টদায়ক। ”

হেনান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল এন্ড ইলেকট্রিক্যাল ইন্জিনিয়ারিং এর শিক্ষার্থী ওমর বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শিক্ষকদের এমন সিদ্ধান্ত প্রতিটি শিক্ষার্থীর মনে স্বস্তির দিয়েছে। যদিও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এর আগে কখনো অনলাইন পাঠদান পরিচালনা করেনি। তাই, এই পরিস্থিতিতে ব্যপারটি কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু, সকল প্রতিকূল পরিস্হিতি মোকাবিলায় চীন সর্বদাই এগিয়ে থাকবে এটাই সবার প্রত্যাশা।’

এদিকে শিক্ষার্থীরা তো বটেই শিক্ষকদের জন্যও ব্যাপারটি বেশ নতুন ধরনের। এই পাঠদান চালাতে নতুন অনেক দক্ষতা তাদের রপ্ত করে শিক্ষার্থীদের কাছে তা সঠিকভাবে দেয়ার ব্যাপরটিকেও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ নিয়ে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টে জেসি শি নামে চেংডুর শহরের এক শিক্ষক বলেন, অধিকাংশ শিক্ষকই কখনও অনলাইনে পাঠদানের সাথে অভ্যস্ত নয়। তাই তাঁদের জন্যও এটি পুরোপুরি নতুন। এখানে একটি ক্যামেরার সামনে স্বাভাবিকভাবেই কথা বলা থেকে শুরু করে উপস্থাপনার সময় ডিজিটাল লাল কলম ব্যবহার, এবং শিক্ষার্থীদের লিখিত মন্তব্যের মাধ্যমে অনলাইন নিয়োজিত রাখার মত বিষয়গুরি রপ্ত করাটা একটা চ্যালেঞ্জ।”

পাঠদানে শিক্ষকরা লাইভ স্ট্রিমিং ক্লাস চালানোর জন্য আলিবাবা’র ডিংটক বা ওয়েইশি ব্যবহার করছেন। এটা অনেক শিক্ষার্থীর জন্য ব্যবহার করা সহজ বলেও জানান এই শি।

চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি জাতীয় ইন্টারনেট ক্লাউড ক্লাসরুম চালু করার পরিকল্পনা করেছে, যেখানে এটির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠদানের কার্যক্রমকে আরো সহজভাবে উপস্থাপন করা হবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!