করোনার নতুন সংক্রামণ প্রযুক্তিতেই রুখে দিল দক্ষিণ কোরিয়া

করোনা জয় করে বিশ্ববাসীর প্রশংসার নহরে যখন কোরিয়া, সফলতার গল্প যখন বিশ্বসম্প্রদায় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সরব ঠিক তখনই করোনা আক্রান্ত এক যুবক কোরিয়াকে ফেলে দেয় করোনার নতুন খাদে।

ইয়ংইনের বাসিন্দা ২৯ বছর বয়সী ওই যুবকের কারণে খোদ রাজধানী সিউলে করোনাভাইরাসের নতুন করে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়ে যায়। তবে সময় লাগেনি তা দমাতে। আর এই ক্ষেত্রেও কোরিয়া হেটেছে আগের অভিনব প্রযুক্তির পথেই।

গত ১০ দিন আগে সিউলের প্রাণকেন্দ্র ও ব্যস্ততম এলাকা ইথেওয়ানের ক্লাব ও বারগুলোই দেশটির করোনা সংক্রমণের সবচেয়ে বড় ক্লাস্টার হয়ে ওঠে। গত ৬ মে ওই এলাকায় নতুন করে ১৫ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার পরই ওঠে আসে করোনা আক্রান্ত ওই যুবকের বিষয়টি ।

Travelion – Mobile

সেই সময় কোরিয়া সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (কেসিডিসি) জানায়, করোনা আক্রান্ত এই রোগীর কারণে সিউলে নতুন করে, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়েছে বলে জানা যায়। ওই সপ্তাহে দুইদিনে ইতেওয়ানের পাঁচটি ক্লাব এবং বার ও রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলেন ওই যুবক। যেখানে প্রায় দেড় হাজার মানুষের উপস্থিতি ছিল।

দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে, ইথেওয়ানের সম্পর্কযুক্ত কমপক্ষে ১৬৮ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয় যা কোরিয়ার স্থিতিশীল ভাইরাসের প্রবণতা ধরে রাখার জন্য হুমকি হয়ে দেখা দেয়। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, নতুন আক্রান্তদেরমধ্যে ৮৩ জন সশরীরে সেখানে গিয়েছিলেন। বাকিরা অন্যদের সংস্পর্শ থেকে আক্রান্ত হয়েছেন।

কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের ব্যাপকতা ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি এই ক্লাস্টারকে ঘিরে অনুসন্ধানে নামে সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (কেসিডিসি)। অবলম্বন করে অভিনব প্রযুক্তি ।

কয়েকদিনের প্রযুক্তির সাহায্যে খুঁজে বের করা হয় উপসর্গহীন যুবক থেকে সংক্রামিত বাহকদের। কিউআর কোড ও ব্লুটুথের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে কারা সেখানকার বার ও ক্লাবে গিয়েছিলেন সেসব তথ্য খুঁজে বের করা হয়েছে।

সে সঙ্গে ম্যাসিভ টেস্টের পাশাপাশি কন্ট্রাক ট্র‍্যাসিং, ট্রেকিং, ট্রিটমেন্টেরও যাদু অব্যাহত রয়েছে। ব্যাপকহারে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা হচ্ছে। স্থানীয় জনগণের কাছে টেক্স ম্যাসেজ চলে গেছে। সিসিটিভি ফুটেজেরও দ্বারস্থ হয়েছে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।

এরই মধ্যে ইথেওয়ান ক্লাস্টারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৪৬ হাজার মানুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়ে গেছে। কমে আসতে শুরু করেছে সংক্রামণের সংখ্যা। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সিউলবাসীও।

কোরিয়া কেসিডিসির বিশেষজ্ঞদের মতে, ইথেওয়ানের নাইট ক্লাব পাড়ার করোনা সংক্রামণ বড় আকারের পরিণত হওয়ার আশংখা নেই। রবিবার ব্রিফিংয়ে কেসিডিসির পরিচালক জং ইউন-কায়ং বলেন, ফেব্রুয়ারিতে সাক্ষী হওয়া চূড়ার মতো বিস্ফোরক হয়ে উঠবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে, পরিস্থিতি এখনও সেই আশংখা থেকে দূরে অনেক রয়েছে। রবিবার করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হওয়া ১৩ জনের মধ্যে মাত্র ৫ জন ইথেওয়ানের নাইট ক্লাব পাড়ার সঙ্গে যুক্ত।”

নতুন সংক্রামণ দেখা যাওয়ার পর পরই দক্ষিণ কোরিয়ার ক্লাব ও বারগুলি আবার সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

রবিবারের ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী পার্ক নেউং-হু জানান, শাটডাউন আদেশ মেনে চলছে কিনা তা দেখতে শনিবার ৯ হাজার নাইট ক্লাব পরিদর্শন করেছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ৬ হাজার ৮০০ আদেশ মেনে বন্ধ রাখা হয়েছে পরিদর্শনে দেখা যায়। অবৈধভাবে কার্যক্রম চালানো অপরাধে ১৩ ক্লাবকে প্রশাসনিক দণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এই পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১১ হাজার ৫০ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৯ হাজার ৮৮৮ জন, মারা গেছেন মৃত্যু ২৬২ জন এবং বাকিরা চিকিৎসাধীন। এ পর্যন্ত দেশটি করোনা পরীক্ষা করা হয়েছেন ৭ লাখ ৫০ হাজার জনকে।

আগের খবর
কোরিয়ায় নাইট ক্লাবে করোনা রোগী, আবার কমিউনিটি সংক্রামণ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!