কম খরচে উন্নত চিকিৎসায় মধ্যবিত্তের ভরসা; তামিলনাড়ু

বর্তমানে প্রতিবেশী দেশ ভারতে ভালো চিকিৎসা ও সাশ্রয়ী সেবার জন্য মধ্যবিত্তরাও ভারতে যাচ্ছেন। কলকাতা ছাড়াও জটিল অপারেশন এর জন্য চেন্নাই ক্রমেই বাংলাদেশের মানুষের কাছে নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। 

তামিলনাড়ু রাজ্যের সাথে বাংলার ভাষাগত কিছু সাদৃশ্য ও নামের টাইটেল এবং রিদম এর যৎসামান্য মিল খুজেঁ পান গবেষকরা। আদতে তামিল ভাষা আমাদের দেশের মানুষের কাছে দূর্ভেদ্য ঠেকে। তামিল জনগোষ্ঠির কিছু লোক শ্রীলংকায় বসবাস করে থাকে।

চেন্নাইতে চেন্নাই এ্যাপোলো এবং রামচন্দ্র হাসপাতাল নামে দুটি বিখ্যাত হাসপাতাল আছে। কলকাতার পর আরো ভালো চিকিৎসার জন্য আমাদের দেশের লোকেরা চেন্নাই বা মাদ্রাজে চিকিৎসার জন্য গিয়ে থাকেন।  ভারতেও চিকিৎসা নিয়ে অভিযোগ আছে তার প্রমাণ হলো নচিকেতার বিখ্যাত ‘‘ডাক্তার’’ গানটি। তথাপি বাংলাদেশের মতো বাজে অবস্থা নয়।  আমাদের দেশে একএকটা ফাইভ স্টার হাসপাতালের মতো হাসপাতাল গলাকাটা দাম আর ভুল চিকিৎসার অভিযোগে অভিযুক্ত। রোগীদের কাছ থেকে পয়সা খসাবার হাজার উপায় তাদের জানা। ফলে বাধ্য হয়ে মানুষ ভারত বা থাইল্যান্ড যায়। তবে ভারতের মেডিক্যাল ট্যুরিজম বিশ্বের মধ্যে সবচে দ্রুত বর্ধনশীল। প্রতিবছর ১০ লাখ থেকে ১২ লাখ লোক ভারতে যায়। এর মধ্যে ২০ শতাংশ চিকিৎসা ভিসা নিয়ে যায়, তবে প্রকৃত অর্থে চিকিৎসার্থে যাওয়া লোকের সংখ্যা কমপক্ষে ৬০ শতাংশ হবে। অন্যরা টুরিস্ট ভিসা নিয়ে ভারত যায় । ভারতে চিকিৎসাসেবা বিশ্বমানের। বিশ্বের সব অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম তাদের হাতের নাগালে থাকায় সেখানকার চিকিৎসাব্যবস্থা অনেক উন্নত এবং একই সঙ্গে সাশ্রয়ী। ভারত সরকার দেশের আয় বাড়ানোর জন্য মেডিক্যাল ট্যুরিজমে নজর দিয়েছে।

Travelion – Mobile

চেন্নাইতে চিকিৎসার প্রায় উন্নত সব সেবাই মিলে যায়। অনেকে সেখানে যেতে চান না ভাষাগত সমস্যার কারণে তবে আপনার সাথে যদি হিন্দি বা ইংরেজী জানা কেউ থাকে তাহলে সমস্যা নেই। যদিও চেন্নাই এর কিছু হাসাপাতালে বাঙালী স্টাফ রয়েছে। চেন্নাই থেকেও কম খরচে চিকিৎসা করাতে পারেন ভেল্লরে। ছোট এই শহুরে হাতের নাগালে রয়েছে চিকিৎসা সেবা। সেজন্য একটু খোঁজ খবর নিয়ে যাওয়াই ভালো। এজন্য সবচেয়ে বড়ো সূত্র হলো ইন্টারনেট। ইংরেজীতে সব তথ্যই মিলবে নেটে। চেন্নাই থেকে ১৩৩ কিঃমিঃ দূরত্ব পাড়ি দিতে হবে  ভ্যালর যেতে হলে। এখানে রয়েছে বিখ্যাত  হাসপাতাল  সিএমসি ও নারায়নী ।

এখানকার দুটো হাসপাতালের মান ও সেবা আন্তজাতিক মানের সে অনুপাতে চিকিৎসা ব্যয় বেশী নয়। কারণ সিএমসি হলো খ্রিস্টান মিশনারীদের অলাভজনক হাসপাতাল। অনেক বাংলাদেশী এখানে আসেন। গেলেই দেখবেন। কারণ ভারতে যাওয়া আসার খরচ যোগ করেও আপনার চিকিৎসা খরচ খুব বেশী হবেনা। তবে যাওয়ার আগে মেডিক্যাল ভিসা পাওয়ার জন্য যেসব বিষয় অনুসরণ করতে হয় সেগুলো অনুসরণ করতে ভুলবেননা। আশার বিষয় হলো ভারত সরকারও বর্তমানে তাদের আয়ের কথা ভেবে ভিসা পদ্ধতি সহজ করার কথা ভাবছে। সিএমসি পুরনো হাসপাতাল আরেকটি সংস্থার অধীনে তাই এখান প্রসেসিং একটু ধীর গতিতে হয়। সব জায়গায় লাইনে দাড়িয়ে কাজ সারতে হয়।

তবে জটিল রোগী বা টাকার প্রবাহ ভালো থাকলে যেতে পারেন এপোলোতে আর না থাকলে সিএমসি ছাড়াও  শ্রি রামচন্দ্র বা নারায়নী হাসপাতালে  যেতে পারেন। এসব হাসপাতালের সেবা অবশ্যই বিশ্বমানের আর তাদের রয়েছে আধূনিক যন্ত্রপাতি ও দক্ষ স্টাফ। আর যাই হোক তারা কসাইয়ের মত জবাই করেনা। আর আচার ব্যবহারও ভালো। এগুলো বাংলাদেশের দামী হাসপাতালগুলোর চেয়ে ভালো সেবা দেয়।

ওয়েব লিংক
http://chennai.apollohospitals.com/ ( চেন্নাই এপোলো হাসপাতাল)
http://www.narayanihospital.org/ (নারায়নী হাসপাতাল, ভ্যাল্লরে)
http://clin.cmcvellore.ac.in/webapt/ ( সিএমসি ভেল্লরে)
http://www.sriramachandra.edu.in/ (শ্রীরামচন্দ্র হাসপাতাল, ভেল্লরে)
যাবেন কিভাবে

ঢাকা-চেন্নাইঃ ঢাকা হতে সরাসরি এয়ারে চেন্নাই যেতে পারেন। অথবা ঢাকা থেকে কলকাতাঃবাস বা ট্রেনে যেতে পারেন তারপর কলকাতা থেকে
কলকাতা – চেন্নাই ট্রেনঃ জেনারেল টিকেট ভাড়া থ্রি টায়ার এসি – ২৫০০+-রুপি, ননএসি- ১২০০+- রুপি। ২৫ থেকে ৩০ ঘন্টা জার্নি। বিমানঃ ৫ থেকে-৭ হাজার  রুপী। বিমানের ভাড়া সবসময় উঠানা করে। এটা নির্ভরকরছে আপনি কতোদিন আগে টিকে কাটছেন তার উপর। তাছাড়া সময়, এভিয়েশন এবং টাইপের উপরও ভাড়া নির্ভর করে।

চেন্নাই থেকে ভেল্লরে যেতে ট্রেন পাবেন তবে খুব ভীড়। টেক্সি ক্যাব রিজার্ভ – ১৫শ থেকে ২৫ শ রুপী নেয়। সময় ২ আড়াই ঘন্টা।
কলকাতা-চেন্নাই ট্রেনের টিকেট পাওয়া খুব কষ্টকর। ভালো সেবাদানকারী ট্রাভেল কোম্পানীগুলো হতে পারে আপনার ভরসা। ভেলরের রেলস্টেশন এর নাম কাটপাডি। ট্রেনে ২৮/৩০ ঘন্টা সময় লাগবে।

থাকার জন্য কাছাকাছি হোটেল রয়েছে। অনেক হোটেলে আবার গ্যাস সিলিন্ডার রয়েছে। রান্না করে খাওয়া যায়। এসবের জন্য আলাদা বিল দিতে হয়।

জরুরী আরো কিছু বিষয়:

সিএমসিতে শুরুতেই সকল রোগী ও তার এটেনডেন্টকে  রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। বাংলাদেশ হতেই অনলাইনে প্রি রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন বা  অফিসের আশে পাশেই সাইবার ক্যাফ/কম্পিউটার দোকান হতে ৫০ রুপির বিনিময়ে প্রিরেজিস্ট্রেশন করা যায়। রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে কনফারমেশন মেসেজটি প্রিন্ট করে নেবেন।  এই প্রিন্টেড কপি, রোগী ও এটেনডেন্টের পাসপর্টের মুল ও ফটোকপি অফিসে ইনফরমেশন অফিসে জমা দিতে হবে।  ডাকএলে রেজিস্ট্রেশন, ডাক্তারের এ্যাপয়েন্টমেন্ট সবকিছুই জানিয়ে দেবে। আগের ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন, ডায়াগনোস্টিক রিপোর্ট দেখতে চাইতে পারে তাই সব কিছু সাথে রাখবেন, সেটা বাংলাদেশের বা অন্য কোথাও আগে চিকিৎসা করালে। পরে এপয়েন্টম্যান্ট অনুসারে ডাক্তার দেখাতে হবে। ডাক্তার এপোয়েন্টমেন্ট ডেট দেরীতে হলে যদি দ্রুত ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন হয় তাহলে সেটাও দ্রুত করার ব্যবস্থা রয়েছে। না কাউকে ঘুষ বা ম্যানেজ করে নয়। অফিসে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা করা যায়।
রেজিস্ট্রেশানের পর আপনাকে ক্রিশকার্ড দেবে। ক্রিশ কার্ড মূলত সিএমসি এর একটি ডেবিট কার্ড।  আপনার সকল টাকা হাসপাতালের নির্ধারিত কাউন্টারে জমা দিয়ে ক্রিশ কার্ডে টাকা ভরে নিন, তাতে টাকা নিয়ে টেনশান থাকেনা। এজন্য কিছু চার্জ নেবে তা খুব কম। ডাক্তার ভিজিট, ঔষধ ক্রয়, হাসপাতাল ভর্তি হতে শুরু করে সিএমসিতে আপনার যে কোন বিল ক্রিশ কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারেন। এটি চুরি হলেও কোনো ক্ষতি নেই । কারণ অন্য কেউ  এটা দিয়ে আপনার বিল যেটা আপনার রোগীর জন্য আপনার প্রদেয় সেটা ছাড়া  অন্য কোন পেমেন্ট করতে পারবে না।  ফেরার সময় টাকা তুলে নিন। চাইলে কিছু ব্যালেন্স রাখতে পারেন। পরে যাওয়ার দরকার হলে ডাক্তার এপয়েন্টমেন্ট নিতে লাগতে পারে।

ভারতে সব শহের মেক্যিাল ভিসায় বা ডাক্তার দেখাতে গেলে রোগী ও রোগীর এটেনডেন্টকে থানায় রিপোর্ট করতে হয়। এজন্য প্রথমে অনলাইনে ‘সি’ ফরম পূরন করে নিতে হবে। চিকিৎসা সেবা দেয়া শহরগুলোর হোটেলের ম্যানেজারকে বললে ‘সি’ ফরম পূরনে ব্যবস্থা করে দেয়।  তারপর ‘সি’  ২ কপি প্রিন্ট করে নিতে হবে, সাথে হাসপাতালের রেজিস্ট্রেশন ফরম , হোটেলের ভিজিটিং কার্ড, পাসপর্টের মুল ও ফটোকপিসহ  পুলিশ স্টেশনে জমা দিয়ে আসতে হবে। তবে এটা দিনের যেকোনো সময় গিয়ে করে আসলেই হবে। হোটেল বা হাসপাতাল থেকে আপনাকে বলে দেবে কি করতে হবে। রোগীর যদি অপারেশনের দরকার হলে মহিলা এটেন্ডেন্ট নিয়ে যাবেন। হাসপাতালে রাতে রোগীর সাথে শুধু মহিলা থাকতে পারবে। মহিলা নিয়ে না গেলে দৈনিক ২০০ রুপীতে আয়া পাওয়া যায়।

টাকা পয়সা সাথে নেয়া ভালো। তবে এক্ষেত্রে ডলার নিয়ে যাওয়া ভালো। বর্ডারে অন্যকিছু নিতে নিরুৎসাহিত করা হয়। আর টাকা অন্য শহরের চেয়ে কলকাতায় ভাঙ্গােলে ভালো রেট পাবেন। ডলারের ক্ষেত্রে অবশ্য খুব বেশী পার্থখক্যনেই।

 

 

 

 

 

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!