কখনই আগের অবস্থায় ফিরবে না বিশ্ব এভিয়েশন!
বিশ্ব এভিয়েশনে রেকর্ড পরিমাণ লোকসানের পর আগাম ফ্লাইট বাতিল ও বিমান-ক্রু’দের চাকরি ছাটাইয়ের সংবাদ এভিয়েশন শিল্পের জন্য অশনি সংকেত বটে। এসবের মধ্যে আর যোগ হয়েছে সিঙ্গাপুর চাঙ্গি বিমানবন্দরের টার্মিনাল-২ বন্ধ ঘোষণা, ইজি জেটে ধ্বস, বিমান সংস্থা ডেলটার ৬০ মিলিয়ন ডলারের লোকসান আর লুফথানসার ৩২ টি বিমান ডিকমিশন করা সবই এই খাতের জন্য চরম দুঃসংবাদ।
যদিও এই খাতে এখনও একটি ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে যেখানে এটিকে ধরা হচ্ছে একটি সাময়িক ধ্বস হিসেবে। তবে এভিয়েশন খাতের অনেকেই এটিকে কোন ছোটখাট সাময়িক বিপর্যয় হিসেবে দেখছেন না।
এই যেমন এভিয়েশন খাতের বিখ্যাত সাংবদিক জেকব ফেবিনজার এটিকে দেখছেন অপূরণীয় বিপর্যয় হিসেবে। সম্প্রতি একটি প্রবন্ধে তিনি দাবী করেছেন, পশ্চিমা বিশ্বের বাণিজ্যিক এভিয়েশন খাত আর কখনোই উঠে দাঁড়াতে পারবে না।
সাংবদিক জেকব ফেবিনজার মনে করেন, কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের কারণে ফ্লাইগস্কেম বা ফ্লাইট শেইম ধারণাটির আরো বিস্তার ঘটবে। যেখানে এর মধ্যে ইউরোপের প্রভাব ছিল যেমন, জার্মান এভিয়েশন বাজারে বেশ সরব হয়েছিল ফ্লাইগস্কেম সেখানে এই মহামারির পর পশ্চিমা বিশ্বের ফ্লাইটে চড়ার বিষয়টি নিয়ে পরিবেশবাদিরা আরো চড়াও হবে সন্দেহ নেই।
তবে এইসব পরিবেশবাদি বিষয় ছাড়াও আরো নানা নেতিবাচক ব্যাপার এভিয়েশনকে পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যাবে যার কারণে আর কখনোও আগের অবস্থায় ফিরতে পারবে না বিশ্ব এভিয়েশন।
এয়ারলাইন্স ব্যবসা পর্যটন থেকে বেশ লাভবান হয় সন্দেহ নেই। কারণ পর্যটন একই সাথে বিলাসিতা এবং প্রয়োজন। ভ্রমণে যাতায়াতে চাহিদা বাড়ায় অনেকেই এভিয়েশনর মত দ্রুত, দিন দিন সস্তা হওয়া অথচ চাকচিক্যময় সেবা নিতে ঝোঁক দেখায়।
অথচ, কোভিড-১৯ এ বন্ধ হয়ে গেছে অধিকাংশ বিমান ভ্রমণ। এমনকি সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করার আগেই, মানুষ নিজের থেকেই বিমান চলাচলে নিরুৎসাহিত হয়েছে।
তাই সাংবাদিক জেকব মনে করেন আপাতত স্বল্পমেয়াদে এই ভ্রমণে ধ্বস নামলেও পরবর্তীতে উড়োজাহাজে ভ্রমণের বিষয়টি আর একই রকম থাকবে না।
তাঁর মতে আমরা যে অর্থনৈতিক মন্দায় প্রবেশ করতে যাচ্ছি, তাতে বিশ্বের অনেক মানুষের আয়ে ব্যাপক ফারাক আসবে। তাঁর বিশ্বাস এই দূর্যোগের পর আমরা সবাই আর আগের মত উড়োজাহাজ ভ্রমণকে ঝুঁকিমুক্ত হিসেবে দেখব না।
যুক্তরাজ্য সরকারের অনুমান তাদের দেশে অন্তত ১৫ মিলিয়ন মানুষ চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকে যার কারণে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থামার পর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা কিংবা এই রোগের ভ্যাকসিন আবিস্কার হলেও সবাই আর আগের মত প্লেনে চড়তে ঝাঁপিয়ে পড়বে না।
আগামী কয়েক বছর পরেও কোভিড ১৯ যদি বিশ্বে পরাজিত হয় তবেও এই অবস্থা বদরাবে না বলে জানিয়ে দেন এই এভিয়েশন এক্সপার্ট। ঠিক যেমন নাইন ইলেভেনের পর বিমানবন্দরগুলোতে নিরাপত্তা তৎপরতা বেড়ে গিয়েছিল এখন এই দূর্যোগের পর স্বাস্থ্য চেকআপ বিমানবন্দরগুলোতে নিয়মিত ব্যাপার ও দূর্ভোগ হয়ে দেখা দেবে। তাই এতে ঝুঁকি ও ঝামেলা বাড়ায় উড়োজাহাজে আগ্রহ কমবে মানুষের। তাদের অনেকেই বেছে নিবে চেষ্টা করবেন ভূমি নির্ভর ভ্রমণ।
সাংবাদিক জেকব ফেবিনজার এর ধারণা ফ্লাইটে ভ্রমণে বিধিনিষেধ উঠিয়ে দেওয়ার পর ব্যবসায়িক ভ্রমণ বন্ধ হবে এমনটা ভাবা যৌক্তিক হবে না। এটা ঠিক যে কর্পোরেট ভ্রমণ সবসময় একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে বিদ্যমান থাকবে যেহেতু ভিডিও কল বা প্রযুক্তি ব্যবহার করে মুখোমুখি মিটিংয়ের মত কার্যকর ফল পাওয়া যায়না।
কিন্তু বর্তমান ভ্রমণের বিধিনিষেধ উঠিয়ে নেয়া হলেও কোম্পানিগুলো তাদের কাজ সারতে নতুন পথের সন্ধান করবে বলে মনে করেন এভিয়েশন এই বিশেষজ্ঞ।
উড়োজাহাজ ভ্রমণ কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ায় ব্যবসায়িক ভ্রমণ কর্পোরেট সামাজিক দায়িত্বের একটি ইস্যু হয়ে উঠবে। কারণ পরিবেশবাদ আর কোম্পানির ইমেজ রক্ষা করতে তাই আগের মত আর কর্মীদের কথায় কথায় ব্যবসায়িক ভ্রমণে পাঠাবে না কোম্পোনিগুলো।
আগের খবর :
লকডাউনের পর কেমন হবে ভ্রমণ অভিজ্ঞতা?