ওমানে প্রবাসী জমায়েতে কঠোর নিষেধাজ্ঞা, অমান্যে আইনি শাস্তি

ওমানে সকল জমায়েত ও সমাবেশে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে করোনাভাইরাস রোধে গঠিত সুপ্রিম কমিটি। একই সঙ্গে ঘোষণা করেছে যে, নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারী অর্থ্যাৎ জমায়েত সমাবেশে অংশ নেওয়াদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ছাড়া সরকারি সংস্থাগুলিকে প্রয়োজনীয় কাজ সারাতে কর্মস্থলে উপস্থিত কর্মীদের সংখ্যা ৩০% -এর বেশি না করা এবং বাকি কর্মীদের কর্তৃপক্ষের নিদের্শনা অনুসারে দূর থেকে কাজ করার (বাসা থেকে) ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কমিটি।

করোনাভাইরাস (কোভিড -১৯) এর বিস্তার রোধে সুপ্রিম কমিটির এমন সিদ্ধান্ত ঘোষণা পরপরই ওমানের শ্রম মন্ত্রণালয় দেশটির বেসরকারী খাতের সংস্থাগুলিকে তাদের প্রবাসী কর্মীদের অফিসের কাজের সময় শেষে বাড়িতে থাকতে এবং সামাজিক জমায়েত এড়াতে নির্দেশ দিয়েছে। ।

Travelion – Mobile

প্রবাসী কর্মীদের ঘরে থাকার অনুরোধ জানিয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বেসরকারী খাতের সকল সংস্থা তাদের প্রবাসী কর্মীদের সাপ্তাহিক এবং সরকারী ছুটির দিনেও তাদের কর্মঘণ্টা শেষে বাড়িতে থাকার জন্য নির্দেশ দিতে হবে। প্রবাসী কর্মী/ শ্রমিকদের জরুরী প্রয়োজন ছাড়া পাবলিক প্লেস ও মার্কেটে যাওয়া এড়ানো উচিত।”

বিজ্ঞপ্তিতে আদেশ অমান্যকারী প্রবাসী কর্মীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করারও হুশিয়ারী দেওয়া হয়েছে।

 গতকাল রোববার  মাস্কাট হামিরিয়া এলাকায় প্রবাসী বাংরাদেমিদের ভিড়
গতকাল রোববার মাস্কাট হামিরিয়া এলাকায় প্রবাসী বাংরাদেমিদের ভিড়

ধারনা করা হচ্ছে, মরণঘাতি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সুপ্রিম কমিটির নিষেষাজ্ঞা অমান্য করে দেশটিতে বসবাসরত প্রবাসী বিশেষ করে বাংলাদেশিদের জমায়েতের পরিপ্রক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গতঃ জিসিসিসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ওমানে এই মরণঘাতি ভাইরাসের প্রাদূর্ভাব ও আক্রান্তের সংখ্যা এখনও সীমিত। আর তা সম্ভব হয়েছে দেশটির সরকারের নেওয়া সময়পোযোগী প্রতিরোধ-সতর্কতা ব্যবস্থা। ওমানের নাগরিক আর প্রবাসীদের সুরক্ষার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে করোনা প্রতিরোধ গঠিত ‘সুপ্রিম কমিটি’।

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে যাওয়া রোধে সুপ্রিম কমিটির নেওয়া অনেকগুলো বাস্তবমূখী সিদ্ধান্তের মধ্যে অন্যতম গণজমায়েত নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকার জন্য বারবার অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও ওমানপ্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকে তা উপেক্ষা করে প্রকাশ্যে জমায়েত, গল্পগুজব এবং আডডায় ব্যস্ত- যা ওমান সরকারের আইন-শৃংখলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নজরে এসেছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ দূতাবাসকে অবহিত করে প্রবাসীদের বিরত থাকার উপর জোর দিয়েছে ।

বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ দূতাবাস প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি সতর্কতা বার্তা জারি করা হয়েছে। “>ভিডিও বার্তায় ওমানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম সরওয়ার করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ওমান সরকারের জারি করা নিদের্শনা মেনে চলার জন্য বাংলাদেশিদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতৃবৃন্দকে প্রবাসীদের সচেতনতায় এগিয়ে আসার আহবানও জানান তিনি।

হামিরিয়া এলাকায় প্রবাসীদের মধ্যে করোনা রোধে  সচেতনতা  লিফলেট ও মাস্ক বিতরণ করে বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাব
হামিরিয়া এলাকায় প্রবাসীদের মধ্যে করোনা রোধে সচেতনতা লিফলেট ও মাস্ক বিতরণ করে বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাব

এদিকে বাংলাদেশ দূতাবাসের অনুরোধের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশি কমিউনিটি সংগঠন ও নেতৃবন্দ প্রবাসীদের করোনা রোধে সচেতনতা করার লক্ষ্যে এগিয়ে এসেছে।। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা ছাড়াও প্রবাসীদের মধ্যে লিফলেট, মাস্ক বিতরণও করা হচ্ছে।

রোববার সন্ধ্যায় রাজধানী মাস্কাটে বাংলাদেশি অধ্যুষিত হামিরিয়া এলাকায় প্রবাসী কর্মীদের মধ্যে লিফলেট ও মাস্ক বিতরণ করে ওমানে বাংলাদেশি কমিউনিটির একমাত্র রেজিষ্ট্রার্ড সংগঠন বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাব। এ সময় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীর সমাগম। ক্লাব নেতৃবৃন্দ প্রবাসীদের গণজমায়েত না করার অনুরোধ জানান।

এ দিকে উদ্দেশ্য মহৎ হলেও তাদের এই উদ্যােগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সংগঠনের নেতৃবৃন্দের জমায়েত- পক্ষান্তরে নিষেধাজ্ঞা ভাঙ্গার সামিল বলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে, যেখানে সবাইকে জােটবদ্ধ উপস্থিতি বা চলাফেরা কিংবা দুজনের মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বলা হয়েছে।

অনেকের মতে, লৌকিকতা-আনুষ্ঠানিকতা পরিহার করে একেবারের প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনশক্তি দিয়ে প্রচারণা চালানো উচিত ছিল। কারো মতে, হামিরিয়াসহ বাংলাদেশি জনবহুল স্পটগুলো যত দ্রুত সম্ভব স্ব-লকডাউন’র ব্যাপারে কমিউনিটিকে জোর দেওয়া উচিত।

“ভিডিও : ওমানপ্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য রাষ্ট্রদূতের সতর্কতা বার্তা

YouTube video

সুপ্রিম কমিটির দেওয়া নতুন নির্দেশনার মধ্যে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত রয়েছে, সেগুলো হচ্ছে; সকল সরকারী এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে গ্রাহক পরিষেবা হলগুলি বন্ধ করে দেওয়া এবং যতটা সম্ভব বৈদ্যুতিন পরিষেবা ব্যবহার করা।

ব্যাংকের সকল মানি এক্সচেঞ্জ ইউনিট বন্ধ করে দেওয়ার নিদের্শ দেওয়া হয়েছে। মহামারী ছড়িয়ে পড়ার জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ব্যাংকগুলি এক্সচেঞ্জ পরিষেবা সরবরাহ করা। নগদ নোট ব্যাধিজনিত রোগের বাহক হিসাবে কাজ করে বলে নগদ লেনদেন সীমাবদ্ধ রাখতে এবং বিকল্প হিসাবে বৈদ্যুতিন (ইলেট্রনিক) ব্যবস্থা র জন্য ব্যবসায়ী, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিকেও অনুরোধ করা হয়েছে।
এ ছাড়া খবরের কাগজ,ম্যাগাজিন এবং অন্যান্য প্রকাশনার মুদ্রণ, বিতরণ এবং বিক্রয় বন্ধ করা এবং বাইরে প্রকাশনা বিক্রয় ও বিতরণ রোধ করা।

এদিকে সুপ্রিম কমিটির সিদ্ধান্তের অংশ হিসাবে রয়্যাল ওমান পুলিশ (আরওপি) পরবর্তী বিজ্ঞপ্তি না হওয়া পর্যন্ত সকল পুলিশ পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে। আরওপি এক বিবৃতিতে বলেছে, “নাগরিক সনদ, পাসপোর্ট, রেসিডেন্ট পারমিট এবং ট্র্যাফিক সম্পর্কিত সমস্ত পুলিশ পরিষেবা আগামী ২৩ মার্চ সোমবার থেকে পরবর্তী বিজ্ঞপ্তি না হওয়া পর্যন্ত সাময়িক স্থগিত থাকবে।”

ওমানে করোনাভাইরাসে সংক্রান্ত নতুন আরও তিনজন শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশটিতে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা ৫৫ তে দাঁড়াল। এর মধ্যে ১৭ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন, দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রবিবার জানিয়েছে।

“করোনাভাইরাসের জীবাণু গরম আবহাওয়ায় টিকে থাকতে পারে না”- এমন পর্যবেক্ষণ আদৌ বাস্তব নয়, স্রেফ গুজব বলে জানিয়েছে ওমানের সরকারী যোগাযোগ কেন্দ্র (জিসিসি) ।

করোনাভাইরাসের আপডেট দিতে জিওসিসি পরিচালিত @OmanVsCovid19 টুইটার অ্যাকাউন্টে আসা এই ধরণের ধারণা উড়িয়ে দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “করোনাভাইরাস গরম এবং ঠান্ডা দুই আবহাওয়াতেই বাস করতে পারে। বাস্তবে, এই ভাইরাস ইতিমধ্যেই গরম জলবায়ুযুক্ত দেশগুলি এবং শীত ও শুষ্ক আবহাওয়ার দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে ।”

” আপনি কোথায় বাস করেছেন বা জলবায়ু কেমন তা নির্বিশেষে মহামারীটির বিরুদ্ধে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি” জিসিসি যোগ করে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!