ওমানে গরিবের দরজায় খাবার নিয়ে কড়া নাড়ে যে মানবহিতৈষী
প্রতিদিন ১০০০ মানুষকে বিনামূল্যে খাবার দিচ্ছেন
ওমানের রাজধানী মাস্কাটের প্রবাসী অধ্যুষিত একটি এলাকা মাতরাহ। করোনা পরিস্থিতিতে কারণে এলাকাটি মার্চ থেকে লকডাউনে। এলাকা সরু গলির ঘরগুলোতে গৃহবাসে অনেক অভাবী পরিবার। বেশিরভাগই প্রবাসী। এমন সংকটের সময়ে অনিশ্চয়তা আর অনাহারে দিন কাটলেও এসব পরিবারের দোরগোড়ায় এক মানবতার ফেরিওয়ালার কড়া নাড়ার শব্দ তাদের মুখে হাসি ফোটায়।
এই মানবতার ফেরিওয়ালার নাম আলী থানি। রমজানের শুরু থেকে প্রতিদিন ইফতারের ঠিক আগে ১০০০ মানুষকে বিনামূল্যে খাবার পৌছে দিচ্ছেন এই রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী। তবে কেবল রমজান নয় লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই এভাবে গরিব-অনাহারি মানুষের কাছে বিনামূল্যে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি।
সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত তিনি তার চার চাকার বাহনে চড়ে মাতরাহ গরিব এলাকা হিসেবে খ্যাত আইয়ান এলাকায় খাবার বিতরণে নিয়োজিত থাকেন। তার বাহনটি একপাশে রেখে একে একে সেখান থেকে নামিয়ে আনেন রান্না করা খাবারের বান্ডিলগুলো সাথে থাকে তাজা ফল ও সবজিও। ওমান অবজারভারের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই মানবতাবাদি ব্যবসায়ীর কথা।
আলি থানি সম্পর্কে সমাজকর্মী ও সরকারি কর্মচারি ইসাম আল বালুসি বলেন, “আলী থানি এই কাজ করছেন যখন থেকে মাসকাট প্রদেশ লকডাউনে গেছে। তাঁর এই মহৎ কর্ম ইতিমধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে।” খাবার বিতরণের কাজে আলীকে কিছু ওমানি ও প্রবাসী তরুণ সহায়তা করছে।[/caption]
আলি থানির দুটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে মাস্কাট ও শারকিয়াতে। ছোটবেলায় স্কুল থেকে বাদ পড়ার পর থেকে পরিবারের সমর্থনে নানা ধরনের ছুটা কাজ করে ধীরে ধীরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন এই সংগ্রামী মানুষ।
আলী থানী ওমান অবজারভারকে বলেন “যখন আমি দেখলাম লকডাউনের কারণে অনেক অভাবী মানুষ বাইরে যেতে পারছেনা এবং তাদের নিত্যদিনের খাবার ও রসদের যোগাড় করতে পারছে না তখন আমার অনেক কষ্ট হল। গেল বছরের মত তারা তাদের ইফতার ও সেহরির জন্য খাবার জোগাড় না করার কষ্টটা আমাকে ভাবিয়ে তোলে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে এসব অভাবী মানুষকে আমার রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু খাবার নিয়ে বিনামূল্যে বিতরণ করে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব। ”
খাবার বিতরণের কাজে আলীকে কিছু ওমানি ও প্রবাসী তরুণ সহায়তা করছে। তাঁর বিতরণ করা প্যাকেটে থাকে কিছু তাজা ফল, সবজি, রান্না করা চাল, হারিজ, মাকবুস, জুস ও লাবনের বোতল যা এক পরিবারের তিন-চার জনের জন্য যথেষ্ট।
পবিত্র কুরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে আলী থানি বলেন, “আল্লাহতাআলা বলেছেন, যারা পৃথিবীতে তার সমগোত্রের উপর নেক নজর দেয় না, চূড়ান্ত বিচারের দিন আল্লাহ তায়ালা তাদের ওপর সুদৃষ্টি দেন না। উপরন্তু আমাদের সব সম্পদ, অর্থ, নাম ও খ্যাতি আমাদের সাথে কবরে যাবেনা বরং যাবে আমাদের সব নেকি কাজের হিসেব। যারা মহান আল্লাহর এই বাণী বিশ্বাস করবে তারাও আমার মত এভাবে এগিয়ে আসবে মানুষের সহায়তায়।