ওমানে কিছু সংস্থার ঘরভাড়া ছাড়ে করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের স্বস্তি
করোনা মহামারিতে থমকে গেছে ওমানের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। কর্মসংস্থান আর আয়ের উৎস হারিয়ে অনেকেরই কাটছে অনিশ্চিত দিন। অর্থনৈতিক সংকটে থাকা এইসব নাগরিক ও বাসিন্দাদের ঘরভাড়া মওকুফ এবং কম নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ওমানের আবাসন কোম্পানিগুলো।
এই পদক্ষেপের কারণে আবাসিক এলাকার ভাড়াটিয়াদের মধ্যে স্বস্তি নেমে এসেছে। যারা তাদের বেতন বা চাকুরি হারিয়েছে মহামারিতে তাদের অনেকেই এখন ভাড়া পরিশোধ করতে পারছে না। তাই এমন সংকটে এগিয়ে এসেছে আবাসন খাতের কর্তারা, এমনটি জানিয়ে টাইমস অব ওমান।
ওমানের তিবিয়ান রিয়েল এস্টেটের নির্বাহী পরিচালক ফাহাদ আল ইসমাইলি টাইমস অব ওমানকে বলেন, “যে সতর্কতামূলক অবস্থা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত চাকরি হারানো বাসিন্দাদের এপ্রিল থেকে ভাড়া অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। এক্ষেত্রে আমরা আমাদের ভাড়াটেদের দুটি শ্রেণীতে ভাগ করেছি – আবাসিক এবং বাণিজ্যিক। তার আগে আমরা তাদের উপর মহামারির প্রভাব যাচাই বাছাই করেছি।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের ভাড়াটেদের মধ্যে যাদের অর্থনৈতিক অবস্থা মহামারির কারণে প্রভাবিত হয়নি তাদের জন্য ভাড়া পরিশোধ অব্যহাত থাকবে। আর যাদের বেতন এই মহামারিতে বেতন কমানো হয়েছে, অথবা তাদের কাজ থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে আমরা বাড়িভাড়া সর্ম্পূণ মওকুফ করেছি। আমরা তাদের নিয়োগকর্তার কাছ থেকে এর প্রমাণ পাওয়ার পর তাদের ভাড়া পরিশোধ থেকে অব্যাহতি দিয়েছি।”
তিনি জানান, তাদের অন্তত ১,৪০০ ভাড়াটের মধ্যে তিন শতাংশ এই সুবিধা পাওয়ার জন্য সারিতে আছেন। তিবিয়ানের প্রায় ৮০ শতাংশ ভাড়াটেদের এই সাহায্য চাইছে। তাই কোম্পানি কোন অতিরিক্ত ফি আরোপ না করে এই সংকটে ক্ষতিগ্রস্তদের চুক্তি ভঙ্গ করার অনুমতি দিয়েছে।
আল ইসমাইলি আরো বলেন, “যাদের রেস্টুরেন্ট এবং ক্যাফের মতো বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড রয়েছে তাদের আয় প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে। এখানে, আমরা এই ধরনের ব্যবসায়ীদের জন্য ভাড়া ৫০ শতাংশ কমিয়েছি। আর আমাদের তালিকায় যারা নাপিত, দর্জি এবং লন্ড্রির দোকানি তাদের ক্ষেত্রে ভাড়া ১০০ শতাংশ মওকুফ করা হয়েছে।
কেবল তিবিয়ান আবাসন কোম্পানি নয় অন্যান্য রিয়েল এস্টেট মালিকরাও একই সিদ্ধান্ত নিয়ে এগুচ্ছেন। উত্তর আল বাতিনাহর সাহাম উইলিয়াতের একটি ভিলার মালিক বাখিত আল বাদি বলেন “আমি ভিলা থেকে ভাড়া মওকুফের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারণ আমি সত্যিই জানি যে ভাড়াটেরা করোনায় দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ”
আবু ওমর, একজন রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগকারী, যার রাজধানী মাস্কাটের রুই এবং আল খুয়াইরে বেশ কয়েকটি ভবন রয়েছে তিনি জানিয়েছেন, তিনি ভাড়াটেদের জন্য ভাড়া ৫০ শতাংশ ভাড়া কমিয়ে দিয়েছেন। আর যাদের ভাড়া এখনও পরিশোধ করতে পারেননি তারা এই বছরের জুলাই মাসের পর ভাড়া পরিশোধ করতে পারবেন।
এর আগে ওমানি চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি ভাড়া পরিশোধে যেসব ব্যবসায়ী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে ভাড়া মওকুফ, হ্রাস এবং সাময়িক স্থগিত রাখার প্রস্তাব করেছিল।
ওমানি চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির রিয়েল এস্টেট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কমিটির চেয়ারম্যান হাসান আল রুকাইশি এই বিষয়ে টাইমস অফ ওমানের সাথে কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, “সালতানাতে করোনাভাইরাস মহামারীর শুরু থেকে আমরাই প্রথম রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ক্ষতিগ্রস্ত ভাড়াটিয়াদের ব্যাপারে গবেষণা এবং ভাড়া মওকুফের আবেদন করেছি। বিশেষ করে বাণিজ্যিক কার্যকলাপে যারা জড়িত এবং এখন যাদের ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ তাদের ক্ষেত্রে। তাদের মধ্যে কারো কারো ভাড়া দেয়ার জন্য কোন আয়ের পথ নেই। সাথে যে সব কর্মচারীদের বেতন কমানো হয়েছে তাদেরও এপার্টমেন্টের ভাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখতে আহ্বান জানিয়েছি।
তিনি বলেন, চেম্বারের সাম্প্রতিক সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং ভাড়াটেদের অর্থনৈতিক বোঝা হালকা করার জন্য সংস্থাটির অনুরোধে রিয়েল এস্টেট মালিকরা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।