ওমানে অন্যরকম লকডাউনে এক মরুচারী
অভিজ্ঞ এক অভিযাত্রী, ভ্রমণপিপাসু ও মরুচারী আহমেদ আল মাহরুকিআহমেদ আল মাহরুকি। ঘুরে বেড়ানোয় যার নেশা, রোমাঞ্চ আর শিহরণ খুঁজে নিতে এক পায়ে খাড়া। করোনা মহামারির লকডাউনে হঠাৎ বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত বড় একটি চ্যালেঞ্জিং ভ্রমণের ইতি টানতে হয়েছিল তাঁকে। ওমানের কিছু ঐতিহাসিক পথ যেগুলো অতীতের অনেক নামকরা পরিব্রাজকেরা ব্যবহার করতেন সেগুলোর সন্ধানে বের হওয়ার পরিকল্পনা ছিল। অথচ বর্তমান পরিস্থিতিতে সব পরিকল্পনা মাটি হল।
তবে বিকল্প এক চ্যালেঞ্জ নিলেন মাহরুকি। করোভাইরাস থেকে নিজেকে রক্ষায় চড়ে বসলেন তাঁর উটের পিঠে। শহরের প্রান্ত ছাড়িয়ে চলে গেলেন অনেক দূরের একটি নির্জন স্থানে। শুরু করলেন অন্যরকম এক কোয়ারেন্টিনের জীবন।
ওমানের রাজধানী মাস্কাট থেকে ২৯৫ কিলোমিটার দূরে একটি ঐতিহাসিক এলাকা দাখিলিয়া প্রদেশের আদম। প্রাচীন দুর্গ, টাওয়ার, মসজিদ এবং নির্জন ঐতিহ্যবাহী সূউক সমৃদ্ধ আদম আদম ওমানের ঐতিহ্য সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান সচেতনতার একটি উদাহরণ।
মাহরুকি আদম এলাকা থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে একটি লোকালয়হীন, দূরবর্তী স্থানে বসতি স্থাপন করেছেন। যেখানে তাঁর একমাত্র সঙ্গী হল উট।
মাহরুকি ওমানের ঐতিহ্যবাহী গ্রামের বাসস্থানের আদলে একটি ক্যাম্প স্থাপন করেছেন, যেগুলো মাস্কাট উৎসবে সাধারণত দেখা যায়। তার ক্যাম্পে রাখা হয়েছে বেঁচে থাকার মৌলিক কিছু উপকরণ। আর খাদ্যের জন্য মাহরুকি স্থানীয়ভাবে যা পাওয়া যায় তার উপরই নির্ভর করছেন। তবে তাঁর ক্যাম্পের আশেপাশে নিজ উদ্যেগে তিনি সব্জি চাষের ব্যবস্থা করেছেন যেটি তাঁকে সারা দিন ব্যস্ত রাখে।
আরও পড়তে পারেন : ওমান প্রেক্ষিত : মাস্ক এবং শাস্তি
মাহরুকির এই লকডাউন জীবন তুলে ওঠে এসেছেওমানের মিডিয়ায়। সেখানে তিনি বলেছেন, “বর্তমান মহামারি আমাকে অনেক কিছুই শিখিয়েছে। এই অভিজ্ঞতা আমাকে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যসচেতনতা থেকে শুরু করে সঙ্গনিরোধের নানা শিক্ষা দিয়েছে যার গুরুত্ব অধিকাংশ মানুষ এখনও অনুধাবন করেনি। আমি মনে করি, ওমানীদের এটা বুঝতে হবে যে তারা নিজেদের এবং তাদের পরিবারকে নিরাপদ রাখতে এসব বিষয় জানা জরুরি।
মাহরুকি বলেন, “এই মহামারি আমাদের সবাইকে শিখিয়েছে কিভাবে নিজেকে নানা সৃজনশীল আর নতুন কার্যকলাপে ব্যস্ত রাখা যায়। কিভাবে কারো সাহায্য ছাড়া নিজের জন্য বাঁচার পথ বের করা যায়। আমি এখানে আমার ক্যাম্পের জন্য প্রয়োজনীয় সব আসবাব বানিয়েছি নিজ হাতে আর পুরো ঘরটি রং করেছি মনের মাধুরি মিশিয়ে। ”
শুধু এসবই নয় মাহরুকি তাঁর অবকাঠামোর অভ্যন্তর শীতল রাখতে ও সেচ কাজে শীতল পরিবেশ তৈরিতে একটি গ্রিন হাউসেও গড়ে তুলেছেন। এজন্য তিনি এক ধরনের ব্লোয়ার পাখা বানিয়েছেন, রেখেছেন পানি নিঃষ্কানের ব্যবস্থাও। সব অবকাঠামো এমনভাবে তৈরি করেছেন যাতে পরবর্তী বছরগুলোতেও এখানে এসে থাকা যায়।
শহর আর মানুষ থেকে দূরে থাকা মাহরুকিকে বিষণ্ণ করে না। আসলে, তিনি এই নতুন জীবনকে বেশ উপভোগ করছেন এবং এর মধ্যে নতুন ধরনের অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ পাচ্ছেন।
মহামারি সবার জন্য একটি পরীক্ষা হিসেবে উল্লেখ করে মাহরুকি বলেন, “এই মহামারি আমাকে অনেক কিছুই শিখিয়েছে। আমার পা এবং পিঠে কিছু সমস্যা থাকলেও এখনও আমি আমার পায়ের উপর বিশ্বাস করে নলকূপ তৈরি থেকে শুরু করে পেইন্টিংয়ের মত কাজ সমানে করে যাচ্ছি। সামনে আসা প্রতিটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি। যখন আমরা সবাই লকডাউনে বন্দি তখন এভাবেই নিজেদের ফিট রাখার সেরা উপায় বের করে নিতে পারি।”
রমজানের আগেই আহমেদ আল মাহরুকি গিয়েছিলেন দূরের এই নির্জনতায় । এরই মধ্যে লকডাউনে তুলে নেওয়া হলেও ওমানে করোনার প্রকোপ কমেনি। মাহরুকি নির্জনতা কাটিয়ে লোকালয়ে ফিরেছেন কিনা কিংবা তার পরিকল্পনার অভিযাত্রা বেরিয়েছেন কিনা তা আর জানা সম্ভব হয়নি।