এমপি পাপুলের অবৈধ সম্পদের খোঁজে নানা তৎপরতা দুদকের
কুয়েতে মানব ও অর্থ পাচারের অভিযোগে আটক লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তে কোমর বেধে নেমেছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রাথমিক তদন্তে পাপুল, তাঁর স্ত্রী সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম, মেয়ে ও শ্যালিকার নামে সম্পদের একাধিক তথ্য-উপাত্ত পেয়েছে দুদকের অনুসন্ধান দল। কর্মকর্তার বলছেন, ওই সব তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কয়েক শ কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে। বিদেশে টাকা পাচারের তথ্য-প্রমাণও মিলেছে।
এরই মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে লেনদেনের তথ্য-উপাত্ত চেয়ে চিঠি পাঠানোর পাশাপাশি পাপুলের স্ত্রী, মেয়ে ও শ্যালিকার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ইমিগ্রেশন বিভাগে চিঠি দিয়েছে দুদক অনুসন্ধান দল। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার পাপুল ও তাঁর স্ত্রী সেলিনার নির্বাচনী হলফনামা পেতে নির্বাচন কমিশনে তাগিদপত্র দিয়েছে দুদকের অনুসন্ধান দল। এ ছাড়া এনবিআরের কাছে পাপুল দম্পতি ও তাঁর শ্যালিকার আয়করের নথিপত্র চেয়েছে সংস্থাটির অনুসন্ধান কর্মকর্তারা ।
আয়কর নথিপত্রের জন্য বুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এনবিআরের কর অঞ্চল-৫ ও কর অঞ্চল-১৩-এর ডেপুটি কমিশনার বরাবর চিঠি দেওয়া হয়। এনবিআরে দেওয়া চিঠিতে পাপুল, স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ও সেলিনার বোন জেসমিনের গত তিন অর্থবছরের আয়কর রিটার্নসহ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চাওয়া হয়েছে বলে
জাতীয় দৈনিক কালের কন্ঠের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন ও দুদক সূত্রে জানা যায়, নির্বাচন কমিশন সচিবের কাছে পাপুল দম্পতির নির্বাচনী হলফনামা চেয়ে তাগিদপত্র দিয়েছে গত মঙ্গলবার পাঠানো চিঠিতে। এর আগে গত ১৬ মার্চ নির্বাচনে পাপুল ও তাঁর স্ত্রী সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলামের নির্বাচন পরিচালনার জন্য টাকা পাওয়ার সম্ভাব্য উৎসর বিবরণী, সম্পদ ও দায় এবং বার্ষিক আয় ও ব্যয়ের বিবরণী, দাখিল করা শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদসহ অন্যান্য রেকর্ডপত্র চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল।
চিঠিতে বলা হয়, লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে গ্রাহককে লোন বরাদ্দ করাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ মানি লন্ডারিং করে বিদেশে পাচার এবং শত শত কোটি টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনসংক্রান্ত একটি অভিযোগ দুদকের অনুসন্ধানে রয়েছে। অভিযোগটি অনুসন্ধানের স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে চাহিদাকৃত রেকর্ডপত্র সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হলো। তবে নির্বাচন কমিশন থেকে নথিপত্র না পাওয়ায় তাগিদপত্র দেওয়া হয়েছে
এদিকে জামশেদ কবীর বাকি বিল্লাহ, নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন, সালাহউদ্দিন টিপু ও আরিফ নামে পাপুল দম্পতির চার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির সম্পদের হিসাব পেতে সাবরেজিস্ট্রার অফিসে চিঠি দিয়েছে দুদক।
গত ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরেফ আবাসিক এলাকা থেকে দেশটির অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) পাপুলকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর বিরুদ্ধে দেশটিতে মানবপাচার ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ রয়েছে।
কালের কন্ঠের প্রতিবেদনে বলা হয়, কুয়েতে মানবপাচার এবং প্রবাসীদের উপার্জনের টাকা কৌশলে হাতিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন জালিয়াতি ও ভিসা ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে কয়েক হাজার কোটি টাকা বাগিয়ে নিয়েছে পাপুল ও তাঁর পরিবার। শুধু তাই নয়, অভিযোগ রয়েছে যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর সঙ্গে পাপুলের ছিল গোপন ব্যাবসায়িক কারবার। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের পর মীর কাসেমের ব্যাবসায়িক কয়েক শ কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাৎ করেন পাপুল।