এমএইচ-৩৭০ নিখোঁজে দায়ী পাইলট, ভাবত মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়ার সরকারের “শীর্ষ পর্যায়ের” দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহ করেছে যে, প্রায় ছয় বছর আগে নিখোঁজ হওয়া মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৩৭০ উড়োজাহাজটি পাইলট দ্বারা গণহত্যা-আত্মহত্যার কাজ ছিল।
বুধবার ও বৃহস্পতিবার প্রচারিত স্কাই নিউজ অস্ট্রেলিয়ার ডকুমেন্টারি “এমএইচ ৩৭০০: দ্য আনটোল্ড স্টোরি” এর প্রথম অংশে এমন বিস্ফোরক মন্তব্য করেন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবট।
২০১৪ সালের ৮ মার্চ কুয়ালালামপুর থেকে বেজিংয়ের দিকে রওনা দিয়েছিল মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের ড়োজাহাজ এমএইচ-৩৭০। বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজটিতে যাত্রী ছিল ২৩৯ জন। কিছুক্ষণ উড়ার পর ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় উড়োজাহাটির। কিছুক্ষণ পর আবার মালয়েশিয়ার সামরিক রাডারে ধরা পড়ে, সম্পূর্ণ উল্টো পথে উড়ছে এমএইচ-৩৭০। তারপর থেকেই গায়েব এমএইচ-৩৭০।
ধারণা করা হয় যে নিখোঁজ উড়োজাহাজটি দক্ষিণ ভারত মহাসাগরে বিধ্বস্ত হয়েছিল। মহাসাগরের ১ লক্ষ ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চিরুনি তল্লাশি চালিয়েও মেলেনি এমএইচ-৩৭০ কিছুই।
২০১৮ সালের জুলাই মাসে একটি আন্তর্জাতিক দল কর্তৃক বিপর্যয়ের একটি সুরক্ষা প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছিল যে উড়োজাহাজটি সম্ভবত কারও দ্বারা ইচ্ছাকৃতভাবে চালিত হয়েছিল এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরে বেশ কয়েক ঘন্টা উড়েছিল।
উড়োজাহাজটি নিখোঁজের হওয়ার পরই প্রধান পাইলট জাহারি আহমদ শাহকে নিয়ে জল্পনা ছড়াতে থাকে। তিনি যে ফ্লাইট সিম্যুলেটরে উড়োজাহাজ চালানো অনুশীলন করতেন, সেটিও আলোচনায় ওঠে আসে। কাঁটাছেড়া চলে তাঁর রাজনৈতিক ভাবনাচিন্তা নিয়েও। ফ্লাইট পরিচালনার শেষ মুহূর্তের কিছু গতিবিধি তাঁর ভূমিকার দিকেই ইঙ্গিত করছে, তা-ও বলা হয়। তবে বিষয়টি প্রমাণ করা যায়নি বা এখনও প্রমাণ হয়নি।
উড়োজাহাজ-অন্তর্ধানের ছ’বছর পূর্তির আগে সেই তত্ত্বেই ফের উসকে দিলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী টোনি অ্যাবট। ফ্লাইটটি নিখোঁজ হওয়ার সময় অস্ট্রেলিয়ার ক্ষমতায় ছিলেন অ্যাবট।
তথ্যচিত্রে স্কাই নিউজ অস্ট্রেলিয়াকে টনি অ্যাবট বলেন যে, উচ্চ পদস্থ মালয়েশিয়ার কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেছেন অভিজ্ঞ প্রবীণ পাইলট জাহারি আহমদ শাহ ইচ্ছাকৃতভাবে এই উড়োজাহাজটি নামিয়ে দিয়েছেন।
তাঁর দাবি, পাইলটই যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সেটিকে ধ্বংস করেছিলেন সে কথা ঘটনার সপ্তাহখানেকের মধ্যে টোনিকে জানান মালয়েশিয়ার উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা।
অ্যাবট বলেন, ‘মালয়েশীয় প্রশাসনের উচ্চপদস্থরা গোড়ার দিক থেকেই মনে করতেন এই গণহত্যা-আত্মহত্যার নেপথ্যের কারিগর বিমানের পাইলটই। কে কাকে কী বলেছেন এ কথা আমি মোটেও বলব না। তবে এ কথা জোর দিয়ে বলতে চাই, এই গণহত্যা ও আত্মঘাতী ঘটনার চক্রী হিসেবে পাইলট ছাড়া আর কারও কথা ভাবত না মালয়েশীয় প্রশাসন।’
স্বাভাবিকভাবে অ্যাবটের এ দিনের বক্তব্যে সে কথা ওঠায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শাহের প্রিয়জনেরা।
মালয়েশিয়ার অসামরিক বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রকের প্রাক্তন প্রধান আজহারউদ্দিন আব্দুল রহমানও বলেন, ‘এই জল্পনা ওঁর পরিজনদের জন্য কষ্টকর কারণ এমন অভিযোগের প্রমাণ নেই।’
বাস্তবিক। কারণ যাঁরা প্রমাণ দিতে পারতেন, প্রায় ছ’বছর পর তাঁদের হদিস মেলা নেহাতই অসম্ভব। আর ধ্বংসাবশেষ? যন্ত্রণা ও ব্যর্থতা তাই এই অন্যতম ‘অ্যাভিয়েশন-মিস্ট্রির’ সঙ্গী এখনও। জল্পনাটুকু না হয় আপাতত তাকে তোলা থাক।
আটলান্টিকের জুলাই ২০১৮ সংখ্যায় লেখক ও উড়োজাহাজ বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম ল্যাঙ্গুইয়েশে নিখোঁজ উড়ােজাহাজের কী ঘটেছিল সে বিষয়ে অনুসন্ধান করেছিলেন, সঙ্গে শাহের দিকে নজর দেওয়া, যার প্রতি “সমস্যার ইঙ্গিত” ছিল।
ল্যাঙ্গুইয়েসের মতে, যে রাত উড়োজাহাজটি নিখোঁজ হয়েছিল, ককপিটে নিয়ন্ত্রণটি রাত সোয়া ১ টা ০১ মিনিট থেকে রাত ১ টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ২০ মিনিট তার হাতে আটক ছিল এবং রাডার রেকর্ডে দেখা গেছে যে এ সময় অটোপাইলট সম্ভবত বন্ধ ছিল।
তবে ২০১ ৯ সালের জুলাইয়ে প্রকাশিত ১৯ সদস্যের আন্তর্জাতিক দলের প্রতিবেদনটি পেশের পর প্রধান তদন্তকারী কোক সু চন একটি সংবাদমাধ্যম ব্রিফিংয়ের সময় বলেছিলেন, দুই চালক ক্যাপ্টেন জাহারি আহমদ শাহ এবং সহ-পাইলট ফারিক আবদুল হামিদের মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ বা মানসিক চাপের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে তাদেরকে উড়োজাহাজটি হাইজ্যাকের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
প্রতিবেদনে অবশ্য বলা হয়েছে যে, উড়োজাহাজের গতিপথটি ম্যানুয়ালে পরিবর্তিত হয়েছিল তবে সন্দেহভাজনদের নাম উল্লেখ করা হয়নি এবং “তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা বাড়ানো হয়েছে।” তদন্তকারীরা জোর দেন য নিখোঁজ হওয়া উড়োজাহাজের ব্ল্যাক বাক্সগুলি পাওয়া না যাওয়া পর্যন্ত বিধ্বস্তের কারণ নির্ধারণ করা যাবে না। নি।
ল্যাঙ্গউইচে উল্লেখ করেছিলেন যে সহ-পাইলটটির সামনে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত ছাড়া আর কিছুই ছিল না এবং অতীতে তার কোনও রেড মার্ক ছিল না।
অন্যদিকে জাহারির জীবনকে অনেক উদ্বেগের বিষয় ছিল। তার স্ত্রী সরে যাওয়ার পরে, ক্যাপ্টেন, যিনি “একাকী এবং দু:খিত” ছিলেন বলে জানা গেছে, তিনি “খালি ঘর প্যাকিং করতে অনেক সময় ব্যয় করেছেন” এবং দু’জন তরুণ ইন্টারনেট মডেলকে আচ্ছন্ন করেছেন। পাইলটের পরিবার অবশ্য তিনি আত্মহত্যা হওয়ার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে অস্বীকার করেছেন।