এক দামে দুই ড্রিমলাইনারের মালিক বাংলাদেশ!

'একটি কিনে একটি ফ্রি'

একটি উড়োজাহাজ কিনে আরেকটি ফ্রি-এভিয়েশন শিল্পের ইতিহাসে এ পর্যন্ত এমন কোন অফার কিংবা চুক্তির কথা কখন শোনা যায়নি। হয়তবা বাড়তি কিছু সুবিধা বা যন্ত্রপাতির দেয়ার সুযোগটা থাকে। তাই এ ধরনের বিষয় অবিশ্বাস্য কিংবা হাস্যকর বলেই উড়িয়ে দেয়াটাই যুক্তিসংগত।

বিষয়টা এমন না হলেও যে দামে দুটি ড্রিমলাইনার কেনার সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত হয়েছে তাতে করে ধরেই নেয়া যেতে পারে’একটি ড্রিমলাইনার কিনে আরেকটি ফ্রি’ পাচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। তুমুল দর কষাকষিতে যখন বোয়িং থেকে দুটি ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার বর্তমান বাজারমূল্যের অর্ধেক দামে, অর্থাৎ ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের কমে কেনা হচ্ছে। এক দামে দুই ড্রিমলাইনারের মালিক হচ্ছে বাংলাদেশ!

একটি বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজের বর্তমান মূল্য ২৯২ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ২টি ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৯ উড়োজাহাজের দাম হতো ৪ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। এখন কেনা হচ্ছে ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও কমে।

Travelion – Mobile

গত বুধবার রাষ্টয়ত্ব বিমানসংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে সর্বসম্মতিতে ড্রিমলাইনার কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। খুব শিগগির একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক দুটি ড্রিমলাইনার কিনতে অর্থায়ন করবে। আর বিমান চলতি মাস থেকে বোয়িং কোম্পানিকে টাকা দেওয়া শুরু করবে। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে নতুন দুটি উড়োজাহাজ বিমান বহরে চলে আসবে। রোববার এমনটি খবর দিয়েছে দেশের শীর্ষ একটি দৈনিকে ।

চীনের অন্যতম বেসামরিক বিমান সংস্থা হেইনান এয়ারলাইনস এসব উড়োজাহাজ কেনার চুক্তি বাতিল করে। এমন প্রেক্ষাপটে বোয়িং কম দামে দুটি ড্রিমলাইনার বিক্রির প্রস্তাব দেয় বিমানকে। এই দুটি ড্রিমলাইনার কেনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সবুজসংকেত পাওয়ার পর দ্রুত ড্রিমলাইনার কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। বোয়িংয়ের সঙ্গে দাম ও আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হয় চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে। বেশ কয়েক দফা বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে বিমান কর্তৃপক্ষের আলোচনা হয়। মাসখানেক ধরে দুপক্ষে মধ্যে তুমুল দর-কষাকষি চলে। শেষ পর্যন্ত দাম অর্ধেকে নেম আসে। ভাগ্য খুলে বাংলাদেশ বিমানের।

বিমানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার দিয়ে উধ্বৃতি দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথমে বোয়িং কোম্পানির পক্ষ থেকে ১৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দাম প্রস্তাব করা হয়। তখন বিমানের পক্ষ থেকে দাম বলা হয় ১৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই দাম জানার পর বোয়িং আরও ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার কমিয়ে প্রতিটি ড্রিমলাইনারের জন্য দাম ১৫০ মিলিয়ন প্রস্তাব করে। এর পরও দুপক্ষের মধ্যে দর-কষাকষি চলতে থাকে। সবশেষ ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও কমে ড্রিমলাইনার দুটি কেনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এর সঙ্গে বাড়তি একটি ইঞ্জিন পাওয়া যাচ্ছে।

জানা গেছে, নতুন দুটি ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনারের সঙ্গে বিমানকে জেনারেল মটরসের তৈরি একটি বাড়তি ইঞ্জিন দিচ্ছে বোয়িং। আগের চারটি ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারের সঙ্গেও বাড়তি একটি ইঞ্জিন পেয়েছিল বিমান।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোকাব্বির হোসেন দুটি ড্রিমলাইনার কেনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও দাম সম্পর্কে জানতে কোন তথ্য জানাতে রাজি হন নি।

চীনের হেইনান এয়ারলাইনসের অর্ডার করা ড্রিমলাইনার ৭৮৭–৯ উড়োজাহাজ দুটি যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে বোয়িংয়ের কারখানায় তৈরি হয়ে আছে। সরেজমিনে দেখত বিমান বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের একটি কারিগরী দল খুব শিগগির সিয়াটলে বোয়িং কারখানায় যাবেন।

ইকনোমি ও বিজনেস ২ শ্রেণীর কনফিগারেশন ২০৬ ফুট দৈর্ঘ্যের বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজে ২৯০ জন যাত্রী বহন করতে পারে। এটি টানা প্রায় ১৪ হাজার ১৪০ কিলোমিটার (৭,৬৩৫ নটিক্যাল মাইল) উড়তে পারে।

নতুন দুটি ড্রিমলাইনার এলে বাংলাদেশ বিমানের বহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা দাঁড়াবে ১৮টিতে। বর্তমানে বহরে ১০টি নিজস্ব এবং লিজে আনা ৬ টি উড়োজাহাজ রয়েছে। নিজস্ব উড়োজাহাজের মধ্যে আছে ৪টি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার, ৪টি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর ও ২টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০। এ ছাড়া আগামী বছর কানাডা থেকে কেনা ৩টি ড্যাশ-৮ দেশে আসছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!