উড়োজাহাজে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কতটুকু?
মাস্ক-গ্লাভস নয়, হাত ধোওয়া বেশি কার্যকর
উড়োজাহাজের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি তুলনামূলক কম। কারণ, আধুনিক উড়োজাহাজে বায়ু সরবরাহ ব্যবস্থা সিনেমা হল কিংবা অফিসের মতো নয়। এখানে মুক্ত এবং পরিশোধিত বায়ুর মিশ্রন থাকে। যেভাবে আমরা সার্জিকাল অপারেশন থিয়েটারে ব্যবহার করি। তাই সরবরাহকৃত বাতাসের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি নেই। ঝুঁকি রয়েছে মানুষের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার।
উড়োজাহাজে ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বিষয়ে ব্লুমবার্গে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমনটি জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থার চিকিৎসক ডেভিড পাওয়ার ।
উড়োজাহাজের সিট, হাতল কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা নিয়ে তিনি জানান, ভাইরাস এবং অন্যান্য জীবাণু আমাদের মতো প্রাণীর শরীরে বাস করতেই পছন্দ করে। কারো সঙ্গে করমর্দন করলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
সিট বা সিটের হাতলে ভাইরাস বেশিদিন বাঁচতে পারে না। সুতরাং ফ্লাইটের কোন বন্তুর চাইতেও অন্য কোনও ব্যক্তির সংস্পর্শের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে বলে মত তাঁর।
উড়োজাহাজে মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহার নিয়ে আরো অবাক করা তথ্য দেন তিনি। বলেন,”মাস্ক বা গ্লাভস ভাইরাস প্রতিরোধের চাইতেও ছড়িয়ে দিতে বেশি কাজ করে।”
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাস্ক বা গ্লাভস পরে খুব একটা উপকার পাওয়া যায় না। মাস্ক পরার মানে হলো অন্যদের নিজের কাছ থেকে রক্ষা করা। তবে সারাক্ষণ মাস্ক পরে থাকাটা কার্যকর উপায় নয়। বরং এটি ভাইরাস সংক্রমণে সাহায্য করে। কারণ ভেজা মাস্ক ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। গ্লাভস আরো খারাপ। কারণ, যারা গ্লাভস পরেন গরমে তাদের হাত ঘেমে ওঠে আর এটি জীবাণু বৃদ্ধি এবং ছড়িয়ে পড়ায় সাহায্য করে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা পেতে মাস্ক অথবা গ্লাভস নয়,বরং বার বার হাত ধোওয়ার উপর জোর দিয়েছেন আন্তর্জাতিক এই চিকিৎসক। বলেন, “ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ঘন ঘন হাত ধুতে হবে, কেবল পানি নয়, সাবান বা অন্যান্য কিছুর মাধ্যমে হাত পরিষ্কার করতে হবে। হাত না ধুয়ে তা কিছুতেই মুখে লাগানো যাবে না।’
তিনি বলেন, “হাঁচি-কাশির সময় মুখ হাত দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে নিতে হবে মুখ। তারপর হাত ভালো করে পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিতে হবে।”
এদিকে, উহান থেকে নাগরিকদের ফেরাতে বিভিন্ন দেশের ব্যবহার করা উড়োজাহাজগুলোর বিষয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এইসব উড়োজাহাজে করোনভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশংকা শূন্যের কাছাকাছি। বায়ু সঞ্চালন ব্যবস্থা চালু থাকলে যে কোন উড়োজাহাজের অভ্যন্তরে সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে যাওয়ার খুব কম সম্ভাবনা থাকে।
বিমানসংস্থাগুলো বলছে, “ফ্লাইট চলার সময় এটি নিয়মিত ব্যপার হল কেবিনে বিশুদ্ধ বাতাস প্রবেশ করা। এর ফলে বিমানের অভ্যন্তরে কোন ভাইরাস সংক্রমণ অসম্ভব একটি বিষয়।”
“যখন একটি উড়োজাহাজ ৯ হাজার মিটার উচ্চতায় উড়ে যায়, তখন উড়োজাহাজের বাইরের তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যায়। এসময় উড়োজাহাজের বাইরের বাতাসকে উষ্ণ করার মধ্য দিয়ে, বায়ু সঞ্চালন ব্যবস্থাটি কেবিনে বিশুদ্ধ বাতাস প্রবেশ করায়”, তারা যোগ করেন। ।
কোরিয়ান এয়ারের উহান উদ্ধার মিশনের উড়োজাহাজ ব্যবহারে আপত্তি ওঠলে সংস্থাটির একজন শীর্ষ কর্তা সংবাদ মাধ্যকে জানান, তাদের উড়োজাহাজগুলোতে বায়ু পরিস্রাবণের যে ব্যবস্থা তার সাথে যে কোন হাসপাতালের বায়ু সঞ্চালন ব্যবস্থার পুরোপুরি মিল রয়েছে।