উহানের ১৭১ বাংলাদেশিকে আনা যাচ্ছে না, নেই খাবারের সংকট
চীনের উহানে থাকা ১৭১ জন বাংলাদেশিকে আনতে বাংলাদেশ বিমানের কোনো উড়োজাহাজ ও ক্রুকে দেশটিতে পাঠানো যাচ্ছে না। তাই করোনাভাইরাস সংক্রমণের কেন্দ্রস্থল থেকে বাংলাদেশিদের আনা এ মুহূর্তে সম্ভব হচ্ছে না।
শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে এক আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন এ কথা বলেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আরও ১৭১ জন এখনো সেখানে আছেন। আমরা তাঁদের আগ্রহের প্রতি খুব সংবেদনশীল। আমরা আগে ৩১২ জনকে আনতে উড়োজাহাজ পাঠিয়েছিলাম। যাঁরা এসেছেন তাঁদের কেউই ভাইরাসে আক্রান্ত নন।
’
আব্দুল মোমেন বলেন, প্রথমে এসে তাঁরা খুব অসন্তুষ্ট ছিলেন, আমরা তাঁদের প্রথম শ্রেণির সেবা দিইনি। পাঁচ তারকা হোটেলে রাখিনি। তাঁদের কেন ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে রাখব? এখন যাঁরা আসতে চান, তাঁদের আনতে গেলে অনেক টাকা খরচ হবে। আমরা তাঁদের আনতে চাই। কিন্তু আমাদের বিমান যেটি আগে গিয়েছিল, তার ক্রুদের সবাই এখন লেট কোয়ারেন্টাইনে বসে আছেন। এখন তাঁরা কোথাও যেতে চাচ্ছেন না। বিমান কোথাও যেতে চাচ্ছে না। আমরা ডিসইনফেকশন করেছি অনেক টাকা খরচ করে। ১ লাখ ৩৩ হাজার ডলার বাড়তি খরচ হয়েছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এ জন্য আমরা বলেছি, যাঁরা ফিরতে চান তারা যদি চাইনিজ চার্টার্ড ফ্লাইট ঠিক করে…আমাদের দূতাবাসকে বলছি তারা চেষ্টা করছে। একপর্যায়ে পাওয়া গিয়েছিল (চার্টার্ড ফ্লাইট) এখন চীনারা অনুমতি দিচ্ছে না। তাই আমরা একটি দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস নিয়মিত তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। তাঁদের বলেছি, ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থেকে চাইনিজরা যখন বলবে, তখন তোমরা আসো। সরকার যদি ওদের পয়সা দিয়ে না আনে, তবে এদের ৮০ শতাংশই আসবে না। বাকিগুলো থেকে যাবে। সরকার বিনে পয়সায় নিয়ে আসে, সে জন্য তাদের আরেকটু উৎসাহ আছে। তারা এখানে আসলে ভালো হয়ে যাবে, এটা ঠিক না।’
উহানে আটকে পড়া বাংলাদেশিরা খাবারসহ নানা সংকটে আছেন বলে শোনা যাচ্ছে। এ নিয়ে জানতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাঁদের খাওয়াদাওয়া সব চীনারা নিশ্চিত করছে। চীনের একজন উপনেতাকে তাঁদের জন্য যুক্ত করা হয়েছে। তাঁরা ২৩টি জায়গায় থাকেন। একেকটি জায়গায় লোক নিয়োগ করা হয়েছে। খাবার-দাবার, পানীয়সহ তাঁদের সবকিছু যথাসময়ে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। কেউ যদি বলে থাকেন খাবার পান না, এটা ঠিক না।
এদিকে চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামান বলেছেন, হুবেই প্রদেশে থাকা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কোনো খাদ্যসংকট নেই। তাই সেখানে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের আতঙ্কিত না হয়ে শান্ত থাকতে ও ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
শনিবার বেইজিং থেকে এক ভিডিও বার্তায় রাষ্ট্রদূত সে দেশে থাকা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতি এ আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন থেকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি একটি চলমান প্রক্রিয়া, যেখানে দুই দেশের সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সমন্বিতভাবে কাজ করছে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে দূতাবাসের একক কোনো ক্ষমতা নেই। এরই মধ্যে ৩১২ জন শিক্ষার্থীকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া বিষয়ে দূতাবাস প্রাথমিক কাজ শেষ করেছে। কিন্তু প্রক্রিয়াটি কবে নাগাদ শুরু হতে পারে, তা নির্ভর করছে বাস্তবতার ওপর। দূতাবাস দৃঢ়তার সঙ্গে নিশ্চিত করতে চায় যে নাগরিকদের সুরক্ষা এবং কল্যাণ নিশ্চিত করাই সরকারের প্রধান লক্ষ্য।
চীনের থ্রি জর্জেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭১ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী খাদ্য ঘাটতির বিষয়ে যে অভিযোগ করেছেন, সে সম্পর্কে মাহবুব উজ জামান বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে থ্রি জর্জেস বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ছাত্রবিষয়ক সমন্বয়কারী লি খেয়ের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলেছি। সেখানকার খাদ্য সরবরাহ সন্তোষজনক বলে তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। এ ছাড়া হুবেই প্রদেশের অন্যান্য প্রধান শহরের মতো বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান ইয়াচাং শহরটিও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় খুব দ্রুত বাইরে থেকে খাবার পাঠানো কঠিন।’
বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত থ্রি জর্জেস বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ছাত্রবিষয়ক সমন্বয়কারীকে উদ্ধৃত করে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্যাভ্যান্ডারে পর্যাপ্ত পরিমাণে গম, চাল, তেল, মরিচ এবং মসলা, চিনি, লবণসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেখানে রয়েছেন, সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। খাদ্য সরবরাহের জন্য কিছু সুপার মার্কেট নতুন করে অনলাইনে অর্ডার নিচ্ছে এবং সরবরাহ করছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যানটিনও অনলাইনে খোলা রয়েছে এবং তারা চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করছে।
মাহবুব উজ জামান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘কোনো সাধারণ পরিস্থিতি নয়’ উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং কল্যাণের জন্য আবাসিক ভবনের ভেতরে থাকতে বলা হয়েছে। কিছু শিক্ষার্থী এখনো বাস্তব পরিস্থিতি উপলব্ধি না করে আতঙ্কিত হচ্ছে, তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্ত থাকা এবং ধৈর্য ধারণ করাই হচ্ছে সর্বোত্তম পথ।