উজবেকিস্তানে বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রথম শহীদ মিনার স্থাপন
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন
মধ্য এশিয়ার বৃহৎ প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র উজবেকিস্তানের বুকে ভাষা শহীদের শ্রদ্ধায় প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। দেশটির রাজধানী তাসখন্দে বাংলাদেশ দূতাবাস চত্বরে উজবেকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জাহাঙ্গীর আলমের পরিকল্পনা ও উদ্যোগে নির্মিত হয় নতুন এই শহীদ মিনার। নবনির্মিত এই শহীদ মিনারে ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের মাধ্যমে পালন করা এবারের মহান শহীদ দিবস ও ২১তম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
২১ ফেব্রুয়ারি সকালে দূতাবাস চত্বরে জাতীয় পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন ও অর্ধনমিতকরণের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচির সূচনা করেন রাষ্ট্রদূত মো. জাহাঙ্গীর আলম। এর তিনি দূতাবাস কর্মকর্তাদের নিয়ে নতুন স্থপিত শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এসময় জাতীয় সঙ্গীন পরিবেশন করা হয়।
এ উপলক্ষে দূতাবাসের হল রুমে আয়োজিত আলোচনা সভার শুরুতে ভাষা শহীদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন এবং দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ এব ভাষাদিবসের উপর তথ্যচিত্র দেখানো হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উজবেকিস্তানে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার মনীশ প্রভাত, ইউএনওডিসির আঞ্চলিক সমন্বয়কারী আশিতা মিত্তাল, উজবেকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, বাঙালি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, ওয়ার্ল্ড ইকোনমি ও ডিপ্লোমেসি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস রেক্টর ও শিক্ষার্থীরা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, প্রাক্তন কূটনীতিক, বিজ্ঞানী, ভাষাতত্ত্ববিদ, উপস্থিত ছিলেন।
বিশেষ বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের প্রদত্ত ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পুরস্কার’ বিজয়ী উজবেকিস্তানের খ্যাতনামা ভাষা গবেষক ড. ইসমাইলভ গুলম মিরজায়েভিচ। এই বছর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিনিসহ দুইজন গবেষককে এই পুরস্কারে ভূষিত করে বাংলাদেশ। তিনি তার মাতৃভাষা উজবেক ভাষার চর্চার প্রসার, সংরক্ষণ এবং সাংস্কৃতিক বিকাশে অগ্রগণ্য ভূমিকা রেখেছেন। বিশ্বে মাতৃভাষা হিসেবে উজবেক ভাষার অবস্থান সংহত করতে বিভিন্ন প্রকল্পের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন ইসমাইলভ গুলম।
রাষ্ট্রদূত মো. জাহাঙ্গীর আলম তার বক্তব্য ভাষা শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ভাষা একটি জাতির পরিচয়। এটি জাতিসত্তার ধারক ও বাহক। আমরাই পৃথিবীর একমাত্র জাতি যারা নিজেদের মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছে এবং সেই ভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। আর এই আত্মত্যাগ শুধুমাত্র তাদের নিজদের ভাষাই নয় বরং সে সাথে বিশ্বের প্রতিটি ক্ষুদ্র ও আঞ্চলিক ভাষার মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। যার ফলে বাংলাদেশের ভাষা শহীদ দিবসটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি লাভ করেছে।
তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বলেন, “১৯৪৮ সালে বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবেই গঠিত হয়েছিল রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। এই পরিষদই ভাষা আন্দোলনকে বেগবান করে। সেই দুর্বার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি শাসকগােষ্ঠীর জারি করা ১৪৪ ধারা ভাঙতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন ভাষা শহীদরা।”
অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন জাতীয়তার নাগরিকদের বিভিন্ন ভাষার ১২ টি কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।