ইস্তানবুলে রানওয়েতে পিছলে তিন টুকরো হল উড়োজাহাজ

তুরস্কের ইস্তানবুল সাবিহা গোকসেন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময়েই রানওয়েতে পিছলে তিন টুকরো হয়ে যায় যাত্রিবাহী বিশাল উড়োজাহাজে।

বুধবার এই মারাত্মক দুর্ঘটনায় একজন যাত্রী নিহত এবং অন্তত ১৫০ জন আহতদের হয়েছেন বলে বিবিসর খবরে বলা হয়। আহত সকলকেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে ইস্তানবুলের গভর্নর আলি ইয়েরলিকায়া মিডিয়াকে জানিয়েছেন।

জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনাগ্রস্থ বোয়িং ৭৩৭ উড়ােজাহাজটির ছিল তুরস্কের পেগাসাস এয়ারলাইন্সের। কম খরচের এই এয়ারলাইন্সের নিয়মিত ফ্লাইটি বন্দর শহর ইজমির থেকে ইস্তাম্বুলের সাবিহা গোকেন বিমানবন্দরে এসেছিল।

Travelion – Mobile

উড়োজাহাজে ৬ জন ক্রু এবং ১৭১ জন যাত্রী ছিলেন। এর মধ্যে ১২ জন শিশুও ছিল তুরস্কের সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা গেছে।

বোষিং উড়োজাহাজটিতে ৬ জন ক্রু এবং ১৭১ জন যাত্রী ছিলেন
বোষিং উড়োজাহাজটিতে ৬ জন ক্রু এবং ১৭১ জন যাত্রী ছিলেন

এ সময় ইস্তানবুলের আবহাওয়া সআবহাওয়া খুবই খারাপ ইস্তানবুলে। ঝোড় হাওয়ার দাপটের সঙ্গে চলছিল তুমুল বৃষ্টি। বিমানবন্দরের রানওয়েতে অবতরণের সময়ে আগুন ধরে যায় এই উড়োজাহাজটিতে। তারপর রানওয়েতে ধাক্কা খেয়ে বেশ খানিকটা পিছলে গিয়ে একটি মাঠে বিধ্বস্ত হয়, ছিটকে তিন টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে এদিক-ওদিক। আগুনে ঝলসে গিয়েছে প্লেনের বাইরের এবং ভিতরেরও বেশ কিছু অংশ।

ইজমির থেকে ইস্তাম্বুলের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া ফ্লাইটটি ছিল পিসি ২১৯৩ । প্যাগাসাস প্রায় সবসময় এয়ারবাস এ ৩২০ বা এ ৩২০ নিউ উড়োজাহাজ এই রুটে দ্বাব্যবহার করে, তবে কোনও কারণে আজ বোয়িং ৭৩৭ দেওয়া হয়েছিল তা জানা যায়নি। এই বোয়িং ৭৩৭ (টিসি-আইজেডকে) নির্ধারিত সময়ের ৩০ মিনিট বিলম্বে ৫ টা ৩৩ মিনিটে ইজমির থেকে উড়াল দেয় এবং ৬ টা ১৯ মিনিটে ইস্তাম্বুলে বিমানবন্দের অবতরণ করে।

গভর্নর আলী ইয়ারলিকায়া বলেছেন, “দুর্ভাগ্যক্রমে,প্যাগাসাস এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটি দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে রানওয়েতে ধরে রাখতে পারেনি এবং প্রায় ১৬৪-১৯৬ ফুট পিছলে চলে যায়। উড়োজাহাজটি রানওয়ের শেষ প্রান্ত থেকে ৩০ থেকে ৪০ মিটারের বাইরে গিয়ে পড়ে।”


স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফাহেরেটিন কোকা নিশ্চিত করেছেন যে, একজন তুর্কি নাগরিক মারা গিয়েছেন এবং আরও ১৫০ জন আহত হয়েছেন। তিনি বলেন,’আহতদের মধ্যে কেউই গুরুতর অবস্থায় নেই।’

সিএনএন- টেলিভিশনে তুরস্কের পরিবহনমন্ত্রী মেহমেট কাহিত তুরহান বলেছেন, “কিছু যাত্রী নিজেরাই উড়োজাহাজটি থেকে সরেআসে। আটকে থাকা বাকিদের উদ্ধারকারীরা দল মুক্ত করে আনতে সক্ষম হয়।”

ইস্তানবুলের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে ইতিমধ্যেই দেখানো হয়ে এই সাংঘাতিক দুর্ঘটনার ছবি। ভাইরাল হয়ে গিয়েছে ঝলসানো এবং ভাঙা প্লেনের খণ্ডের ছবি। যা দেখে শিউরে উঠছেন সকলেই।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে ইতিমধ্যেই দেখানো হয়ে এই সাংঘাতিক দুর্ঘটনার ছবি
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে ইতিমধ্যেই দেখানো হয়ে এই সাংঘাতিক দুর্ঘটনার ছবি

ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে তুরস্কের বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং এয়ারলাইন্স । কীভাবে এই বোয়িং ভেঙে পড়ল তা জানার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা।

২০ বছর ধরে আকাশে থাকা পেগাসাস এয়ারলাইন্সের বহরে ৮৩ টি উড়ােজাহাজের মধ্যে ৪৭ বোয়িং এবং ৩৬ টি এয়ারবাস রয়েছে ।

এর আগে গত জানুয়ারিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ থেকে আসা পেগাসাস এয়ারলাইন্সের এবটি বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজ একই বিমানবন্দরে ( ইস্তানবুল সাবিহা গোকসেন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর) রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে যায়। এতে কোনও হতাহত হয়নি তবে বিমানবন্দরটি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হয়েছিল।

২০১৮ সালের জানুয়ারিতে একটি পেগাসাস বোয়িং ৭৩৭ ট্র্যাবসন বিমানবন্দরে রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে সমুদ্র ধারে নিচে পড়া অবস্থায় আটকে যায়, এতেও কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

বিমান বিশেষজ্ঞ অ্যালেক্স মাচারেস বলেছেন “পেগাসাস তাদের কম ভাড়ার জন্য পরিচিত তবে তারা খুব প্রতিযোগিতামূলক ভাড়া দেওয়ার কারণে তাদেরকে অনিরাপদ হিসাবে চিহ্নিত করা অন্যায় হবে। তবে এখন গুরুতর প্রশ্নের উত্তর খুজতে হবে যে, এই বিমানসংস্থাটি কেন মাত্র চার সপ্তাহের মধ্যে একই বিমানবন্দরেদ্বিতীয়বার রানওয়ে দুর্ঘটনার শিকার হল।”

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!