ইতালির ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’ : বাংলাদেশিদের করোনার জাল সনদ
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস বা কভিড-১৯ এর ভুয়া সনদ বিক্রি হচ্ছে বলে ইতালির একাধিক জাতীয় দৈনিকে বুধবার (৯ জুলাই) খবর প্রকাশ করা হয়েছে। বিষয়টি এখন সমগ্র ইতালিতে ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’।
দেশটির বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম ‘সাড়ে তিন হাজার টাকায় বাংলাদেশে ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট’ শিরোনামে খবর প্রকাশ করেছে। ফলে দেশটিতে এখন বাংলাদেশিরা চরম বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন।
এই কেলেঙ্কারির খবর স্থান করে নিয়েছে ইতালির শীর্ষ জাতীয় পত্রিকা দৈনিক ইল মেসসাজ্জেরো’র প্রধান খবরে। বুধবার (৮ জুলাই) দৈনিক ইল মেসসাজ্জেরো’র প্রধান খবর ছিল, বাংলাদেশ থেকে ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট নিয়ে ইতালিতে ফেরত যাওয়াদের নিয়ে। প্রতিবেদনটিতে ঢাকায় করোনা সার্টিফিকেট জালিয়াতির চিত্রও উঠে আসে। এতে বলা হয়, ফ্লাইটে চড়তে ঢাকায় সাড়ে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজারের মধ্যে ভুয়া স্বাস্থ্যসনদ বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ থেকে আগতরা কীভাবে ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট সংগ্রহ করছে সেই গল্প তাইফুর রহমানের বরাতে ওঠে আসে পত্রিকাটিতে। ফ্লাইটে করে ঢাকা ত্যাগ করে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইস্যু করা স্বাস্থ্যসনদ দেখানো বাধ্যতামূলক। সেক্ষেত্রে অনেকে অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও বিদেশে কর্মস্থলে ফিরতে ভুয়া স্বাস্থ্য সনদ সংগ্রহ করছেন।
বাংলাদেশে এমন জালিয়াতির কারণে ইতালির কেন্দ্রীয় অঞ্চল লাৎসিওর বাংলাদেশি অভিবাসীদের ব্যাপক পরীক্ষার আওতায় আনা হয়েছে। ইতালির রাজধানী রোম একইসঙ্গে এই অঞ্চলটিরও রাজধানী।
আগের খবর: কাতার এয়ারওয়েজে যাওয়া ১২৫ বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে দিলো ইতালি
বুধবার ইতালির রোমের ফিউমিসিনো বিমানবন্দরে পৌঁছানো কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটের ১২৫ বাংলাদেশি যাত্রীকে দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাদের আটকে দেওয়ার পর ওই বিমানে করেই তাদের আবারও দোহায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তবে বিমানে থাকা অন্য যাত্রীদের করোনাভাইরাস পরীক্ষার পর ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টিন সেন্টারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগে অন্য একটি ফ্লাইটের দুই ডজনের বেশি বাংলাদেশি আরোহীর শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশের সঙ্গে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয় ইতালি।
লাৎসি অঞ্চলে করোনা মোকবেলায় কর্তব্যরতরা ধারণা করছেন, গত কয়েক সপ্তাহে অন্তত ৬০০ কভিড-১৯ রোগী ইতালিতে এসেছেন। যাদের অধিকাংশই বাংলাদেশ থেকে করোনা নিয়ে এসেছেন। ইতালির কমিউনিটি নেতারা জানান, বাংলাদেশ থেকে ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট নিয়েই ইতালিতে ফিরেছেন এসব অভিবাসীরা।
বাংলাদেশিদের নিয়ে কয়েকদিন আগে মৃত্যুপুরী থেকে ফিরে আসা ইতালিতে আবারও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। করোনার জীবাণুবাহী বাংলাদেশিদের যাত্রীদের স্থানীয় প্রশাসন ‘সত্যিকারের বোমা’ হিসেবে আখ্যা দেয়। আঞ্চলিক গভর্নর নিকোলা জিঙ্গারেত্তি বলেন, আমরা এই বোমাটি তাৎক্ষণিকভাবে অপসারণ করেছি।
এদিকে অঞ্চলটির বিভিন্ন এলাকায় করোনা আক্রান্ত বাংলাদেশিদের নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। লকডাউন পরবর্তী ফিয়ামিকিনোতে দুইটি ব্যবসায়িক কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। কিন্তু সেখানে এক বাংলাদেশি কর্মীর করোনা শনাক্ত হওয়ায় কেন্দ্র দুইটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ থেকে তিনি ইতালিতে ফেরত গিয়েছিলেন।
রোমের এএসএল রোমা টু এলাকায় বাংলাদেশিদের মধ্যে বাংলা ভাষায় নির্দেশনা প্রচার করেছে কর্তৃপক্ষ। পহেলা জুন থেকে যারা ইতালিতে ফিরেছে তাদের করোনা টেস্ট করানোর জন্য সরকারি কেন্দ্রে যেতে আহ্বান করেছে। এছাড়া সংক্রমণ রোধে এই সপ্তাহে জুমার জামাতে অংশ নিতেও বিরত থাকতে বলা হয়েছে।