ইতালির ঐতিহ্যবাহী পিসা টাওয়ার খুলে দেওয়া হচ্ছে

দীর্ঘ ৩ মাস বন্ধ থাকার পর খুলে দেওয়া হচ্ছে ইতালির ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থান পিসা টাওয়ার। করোনার মৃত্যুপুরীতে পরিণত হওয়ায় ইতালির অবস্থা স্বাভাবিক হতে শুরু করায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে দোকান, রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে খুলে দেওয়া হচ্ছে সব দর্শনীয় স্থান। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে ইতালিতে ৩৩ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে যা বিশ্বে তৃতীয় সর্বোচ্চ।

ইতালিতে লকডাউন শিথিলের সাথে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে পরিস্থিতি। তবে একসাথে টাওয়ারটিতে ১৫ জনের বেশি দর্শনার্থী থাকতে পারবে না বলে নিয়ম জারি করা হয়েছে।

সেই সাথে সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরতে হবে এবং সবার হাতে একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস থাকবে যার মাধ্যমে এক জনের থেকে আরেকজনের দূরত্ব মনিটর করা হবে। কেউ ১ মিটার কম দূরত্বে আরেকজনের কাছে গেলেই কতৃপক্ষের কাছে সিগন্যাল চলে যাবে। প্রতি বছর ৫০ লাখের মত দর্শনার্থী বেড়াতে আসত অপূর্ব সুন্দর এই পিসা টাওয়ারে।

Travelion – Mobile

ইতালির প্রাচীন নগরী পিসায় ১১৭৩ সালে রোমান ক্যাথলিকদের ঘণ্টা স্থাপনের জন্য এই টাওয়ার নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল। স্থাপত্যশৈলীর গোলাকার এই টাওয়ারের তৃতীয় তলার কাজ শেষ হতে সময় লাগে বছর পাঁচেক। আর তখনই ঘটে অদ্ভুত ঘটনা। হেলতে শুরু করে টাওয়ারটি। জানা গেল, স্থাপত্যশৈলীর ভুল ছিল। নরম মাটিতে তিন মিটার গভীরতা টাওয়ার নির্মাণের জন্য যথেষ্ট ছিল না। কিন্তু স্থপতিরাও দমার পাত্র নয়। হেলে যাওয়ার মধ্যেই গড়তে থাকেন একের পর এক তলা। আর টাওয়ারও ক্রমেই হেলতে থাকে।

আরো মজার কথা হলো, ১৮০ ফুট উচ্চতার এই টাওয়ারের নির্মাণ কাজ চলে প্রায় ২০০ বছর ধরে। কারণ মাঝখানে নানা নাটকীয়তা, উৎকণ্ঠা আর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যে নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল। যা-ই হোক নির্মাণ কাজ শেষ হলেও টাওয়ারের হেলে যাওয়া বন্ধ রাখতে পারেনি প্রকৌশলীরা। শত চেষ্টা করার পরেও প্রতিবছর হেলতে থাকে স্থাপনাটি। অবশেষে ১৯৯৮ সালে এসে একটি ফলপ্রসূ উপায় পাওয়া গেল।

বিশেষ কাঠামোর মধ্যে দিয়ে এই স্থাপনাকে অনেকটা ধরে, বেঁধে সরিয়ে ফেলা হয় নিচের আলগা মাটি। পাশাপাশি বিশাল পরিমাণ ওজনদার বস্তু হেলে পড়ার উল্টো দিকে চাপিয়ে দেন স্থপতিরা। চারপাশে বেঁধে দেওয়া হয় বিশেষ মাচা। ২০১১ সালে সব মাচা আবার খুলেও ফেলা হয়। এতে রক্ষা পায় টাওয়ারটি। এখন হেলে পড়া বন্ধ হয়েছে। তবে কয়েক শ বছর হেলে পড়তে পড়তে এখনো প্রায় স্বাভাবিকের চেয়ে ১৩ ফুট হেলে আছে। আর এটাই নাকি হেলানো টাওয়ারের স্বাভাবিক অবস্থা।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!