ইতালিতে ভোট শুরু, এগিয়ে মেলোনির ডানপন্থীরা

ইতালি জুড়ে আজ রোববার সংসদীয় নির্বাচনের ভোট শুরু হয়েছে। যেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে দেশটির সবচেয়ে ডানপন্থী দল ক্ষমতায় আসার এবং প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী পাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে৷। ডানপন্থীরা নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় বিদেশিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আর এ কারণেই উদ্বিগ্ন অভিবাসীরা।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে বিপর্যস্ত বিশ্ব-অর্থনীতি। সেই তালিকা থেকে বাদ নেই ইতালিও। জ্বালানিমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বেসামাল দেশটির নাগরিক জীবন। চলমান এ বাস্তবতার মাঝেই দেশটিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সাধারণ নির্বাচন। ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নির্বাচনে উন্মুখ ইতালিরা।

জুলাই মাসে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মারিও ড্রাঘির সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে গ্রীষ্মকালে নির্বাচনী প্রচার শুরু হয়।

Travelion – Mobile

স্থানীয় সময় রোববার সকাল ৭টা থেকে রাত ১১ পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। আনুষ্ঠানিক ফলাফল সোমবার। প্রায় ৫ কোটিও বেশি ইতালীয়রা যার মধ্যে ৪৭ লাখ যারা বিদেশে থাকে ভোট দেয়ার মাধ্যমে দেশটি সংসদের নতুন প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। যার মধ্যে সিনেটের ২০০ সদস্য এবং ৪০০ জন চেম্বার অফ ডেপুটি।

আরও পড়তে পারেন : মলদোভা নিচ্ছে বাংলাদেশি কর্মী

১০ সেপ্টেম্বর প্রাক-নির্বাচন নিষেধাজ্ঞার আগে প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপ অনুসারে, অতি-ডানপন্থী দল ফ্রেটেলি ডি’ইতালিয়া (ইতালির ব্রাদার্স) এর নেতা জর্জিয়া মেলোনি প্রচারে আধিপত্য বিস্তার করছেন। যেখানে তিনি ২৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। ব্রাদার্স অব ইতালি একটি ডানপন্থি ব্লকের নেতৃত্ব দেয়-যার মধ্যে মাত্তেও সালভিনি এবং বার্লুসকোনির দলও রয়েছে। জরিপে তারাও সম্ভাব্য বিজয়ীর তালিকায় রয়েছে।

সেই নিরিখে মাত্তেও সালভিনির লিগ এবং সিলভিও বার্লুসকোনির ফোরজা ইতালিয়াকে নিয়ে ডানপন্থি সরকার গঠন করতে পারে তার দল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এ পর্যন্ত ইতালিতে ৬৭টি সরকার এসেছে। আর সম্ভাব্যভাবে এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো মহিলা নেতৃত্ব পেতে যাচ্ছে দেশটি। জনমত জরিপে উঠে এসেছে, এবারের নির্বাচনে ইতালির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে মেলোনি।

‘ঈশ্বর, দেশ ও পরিবার’—এ নীতিবাক্যকে সামনে রেখে ৪৫ বছর বয়সী মেলোনি নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। ইউরোনিউজকে দেওয়া এক বিবৃতিতে মেলোনি বলেন, ‘অবশ্যই এটি হবে একটি মাইলফলক। শুধু ইতালিতে নয়, পশ্চিমা সমাজে নারীদের সমাজের গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক ভূমিকা পালনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়। এ কারণে আমি এটিকে টিকে ‘গ্লাস সিলিং’ ভাঙা বলতে চাই।আমার দেশে প্রথম এই অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা পারাটা আমার জন্য হবে সম্মানের।’

আরও পড়তে পারেন : গ্রিসে বিড়ালছানাকে নির্মমভাবে হত্যা, দোষী শনাক্তে ৩০০০ ইউরো পুরষ্কার ঘােষণা

এদিকে, সর্বশেষ জরিপ অনুসারে এনরিকো লেট্টার নেতৃত্বে প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক পার্টি, যারা ২২ শতাংশ ভোট পেয়েছে। তবে অন্য কেন্দ্র এবং বাম-দলগুলির সাথে একটি বিস্তৃত জোট গঠন করতে ব্যর্থ হয়েছে। যা এই নির্বাচনে তাদের জয়ের সম্ভাবনা হ্রাস করেছে।

অন্যদিকে জিউসেপ কন্তের ফাইভ স্টার মুভমেন্ট, যাকে পর্যবেক্ষকরা একটি মরিবন্ড পার্টি হিসাবে বিবেচনা করেছিল, দেশটির দক্ষিণে একটি শক্তিশালী প্রচারণার পরেও ১৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে।

আরও পড়তে পারেন : লেবানন থেকে ইউরোপ : সিরিয়ায় নৌকা ডুবে নিহত ৭৩ অভিবাসী

যদিও সোমবার ফলাফল প্রত্যাশিত, বিশ্লেষকরা বলছেন যে ইতালিতে নতুন সরকার বসতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে। একবার ফলাফল নিশ্চিত হয়ে গেলে, নতুন আইনপ্রণেতারা দুটি চেম্বারের সভাপতিদের জন্য ভোট দেবেন, যারা দলের নেতাদের সাথে রাষ্ট্রপতি সার্জিও ম্যাটারেলার সাথে পরামর্শ শুরু করবেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এ নির্বাচনের দিকে নজর রাখছে। ইতালি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। সুইডেনের নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থীদের জয়ের দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে ইতালিও ডানপন্থী সরকার পাচ্ছে কি না, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ে সংশয়বাদী মনোভাব পোষণ করলেও ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার ওপর ইইউর নিষেধাজ্ঞাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেন মেলোনি। তবে তাঁর মিত্রদের অবস্থান ভিন্ন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেরলুসকোনির সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দীর্ঘ দিনের বন্ধুত্ব রয়েছে। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, পুতিনকে ইউক্রেন যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

আকাশযাত্রার ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিতে চাইলে এখানে ক্লিক করার অনুরোধ

মেলোনি জয় পেলে দেশের মূল্যস্ফীতি থেকে শুরু করে জ্বালানি সংকটসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বেন। ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধকে কেন্দ্র করে এসব সংকটের মধ্যে আছে ইতালি।

ইউরো অঞ্চলে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ইতালি। করোনা মহামারি পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ালেও দেশটি মোট দেশজ উৎপাদনের ১৫০ শতাংশ সমমূল্যের ঋণে জর্জরিত। নির্বাচনী প্রচারণায় মেলোনি নিজেকে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত বলে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। অবশ্য তাঁর দল এর আগে কখনো ক্ষমতায় ছিল না।

এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী এনরিকো লেত্তার নেতৃত্বাধীন মধ্যম বামপন্থী দল বলছে, মেলোনি গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক। দলটি আরও বলেছে, মেলোনি সরকার গঠন করলে মানুষের গর্ভপাতের অধিকারের মতো বিভিন্ন অধিকারের বিষয়টি ঝুঁকির মুখে পড়বে। তিনি বৈশ্বিক উষ্ণতার বিষয়কে এড়িয়ে যাবেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!