অবশেষে মর্গ থেকে দেশে ফিরছে কাতারপ্রবাসী গিয়াসের মরদেহ

ভাগ্য বদলাতে, জীবন সাজাতে মানুষ প্রবাসী হয়। সেই প্রবাসই আবার থেমে যায় মানুষের জীবন। মৃত্যুের জন্যই যখন জন্ম, তাই এটা মেনে নেওয়াই স্বাভাবিক। যদিও মেনে নিতে পারবে না পরিবার-স্বজন। কিন্তু মৃত্যুের পরও যদি শেষ ঠিকানা কবরের পরিবর্তে লাশ ঘরে হিমায়িত দিনের পর দিনের পড়ে থাকতে হয়, তবে সেই প্রবাসীর ‘দুর্ভাগ্য’ কোন অভিধায়ে ফেলা যায়? চট্টগ্রামের সন্তান গিয়াস উদ্দিন। দুবছর আগে বিয়ে করেছেন। বাবা-মা, স্ত্রী নিয়ে তার পরিবার। ভাগ্য বদলাতে প্রবাসী হয়েছিলেন কাতারে। ভাগ্য বদলানোর আগে থেমে গেছে জীবন। এর চেয়ে দূর্ভাগ্য তার হিমঘরে দীর্ঘবাস। প্রিয়জনকে শেষ দেখার অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় না পরিবারের। অবশেষে হাজির মানবতাপ্রেমী এক ত্রাণকর্তা।

প্রায় একমাস মর্গে পড়ে থাকা কাতারপ্রবাসী গিয়াস উদ্দিনের মরদেহ অবশেষে দেশে ফিরছে। শুক্রবার রাতে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে মরদেহ দেশের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। কাতারপ্রবাসী এক দরদী বাংলাদেশির মানবিকতায় দেশে ফিরছে হতভাগ্য এই প্রবাসীর মরদেহ।

শুক্রবার বাদ আসর রাজধানী দোহার হামাদ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে মরহুমের নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। অর্থ আর উদ্যােগের অভাবে মাস ধরে এই হাসপাতালের মর্গে পড়ে আছে অসহায় প্রবাসীর গিয়াস উদ্দিনের মরদেহ।

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা এম,চর,হাটের গৌরস্তান ওয়ার্ডের নিবাসী আব্দুল মালিকের ছেলে গিয়াস উদ্দিন (৩৬) গত ১৮ অক্টোবর কাতারে হৃদরোগে মারা যান।

Travelion – Mobile

কাতারে তার ঘনিষ্ট কেউ না থাকায় মরদেহ দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়। মরদেহ পড়ে থাকে হামাদ হাসাপাতালের মর্গে।

এ খবর পেয়ে মরদেহে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে এগিয়ে আসেন একটি কাতারী প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার সিলেটের কুলাউড়ার সন্তান সাদ হোসেন । হাসপাতাল, দূতাবাস, জনশক্তি, ইমিগ্রেসন, বিমান অফিস দপ্তরে যোগােযোগ করে মরদেহ পাঠানোর সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন। যোগান দেন প্রয়োজনীয় খরচও।

কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ সঙ্গে সাদ হোসেন
কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ সঙ্গে সাদ হোসেন

এদিকে মরদেহ পাঠানো নিয়ে বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষের সাথে সাদ হোসেনের ভুল বোঝাবুজির অবসান হয়েছে বলে জানা গেছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য অনুতপ্ত হয়েছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কান্ট্রি ম্যানেজার রেজাউল আহসান।

জানা যায়, গত সোমবার (১১ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১ টায় ফেসবুক লাইভে এসে সাধ হোসেন অভিযোগ করেন মৃত ব্যক্তির ফাইল না দেখে বিমানের কান্ট্রি ম্যানেজার তা ছুড়ে ফেলে দেন। তার ফেসবুক লাইভের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুহুর্তেই ভাইরাল হয় এবং আলোচনার ঝড় উঠে।

এ বিষয়ে বিমানের কান্ট্রি ম্যানেজার রেজাউল আহসান জানান, প্রবাসীর মরদেহ দেশে পাঠাতে বেশ কিছু প্রক্রিয়া সারাতে হয়। এর মধ্যে অন্যতম দেশে যাওয়ার পর মরদেহ বিমানবন্দর থেকে কে গ্রহণ করবে তা নিশ্চিত করা। কারণ সময় মতো গ্রহণ না করলে মরদেহে পচন ধরার আশংখা থাকে। তা ছাড়া পবিত্রতাও নষ্ট হয়। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষেই মরদেহ তুলে দেওয়া হয় উড়োজাহাজে।

তিনি বলেন,’দুপুরে মধ্যাহ্নভোজের ঠিক আগ মুহূর্তে সাদ হোসেন কাগজপত্র নিয়ে আসার পর এইসব বিষয় নিশ্চিত হতে গেলে আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়। ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। তারপরও আমার কথায় যদি তিনি কষ্ট পেয়ে থাকেন আমি অনুতপ্ত ও দুঃখ প্রকাশ করছি।’

বিমানের কান্ট্রি ম্যানেজার  মরদেহ পাঠানোর সকল কাগজপত্র হস্তান্তর
বিমানের কান্ট্রি ম্যানেজার মরদেহ পাঠানোর সকল কাগজপত্র হস্তান্তর

ঘটনার রাতেই দোহায় বিমান বাংলাদেশ অফিসে কাতারের কয়েকজন প্রবাসী সাংবাদিকের মধ্যস্থতায় দুপক্ষের ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয় এবং মরদেহ পাঠানোর সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।

বিমানের কান্ট্রি ম্যানেজার রেজাউল আহসান মরদেহ পাঠানোর সকল কাগজপত্র হস্তান্তর করেন সাধ হোসেনের কাছে। এ সময় প্রবাসী সাংবাদিক এম এ সালাম, আমিন বেপারী এবং আকবর হোসেন বাচ্চু এবং চট্টগ্রাম সমিতি কাতারের একাংশের সাংগঠনিক সম্পাদক নাছির উদ্দিন, উপস্থিত ছিলেন।

[প্রিয় পাঠক, আকাশযাত্রা প্রবাস বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকসহ কমিউনিটির নানান খবর, সংগঠনের খবর, ভ্রমণ, আড্ডা,আনন্দ-বেদনার গল্প, ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। লেখা ছবিসহ মেইল করুন [email protected] এই ঠিকানায়]

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!