অনন্য পতাকাবাহী কূটনীতিক আবিদা ইসলাম

তিনি শুধু একজন কূটনীতিক নন, একজন শিল্পীও বটে। তিনি গান বাঁধেন ও সেগুলোকে গাঁথেন বিভিন্ন সুরে। সুরের মুর্ছনা বিমোহিত ও আন্দোলিত করে মানুষকে। সুরের তালে হৃদয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয় মানুষ। সৃষ্টি হয় মানুষে মানুষে বন্ধন। তাই সঙ্গীতের সুর ছাপিয়ে যায় দেশ, মহাদেশ, সীমানা, সংস্কৃতি, ভাষা ও কৃষ্টিকেও। সেই সুরের মুর্ছনা তৈরির কাজটি করে থাকেন শিল্পীরা। যদি এই দায়িত্বটি নিজ কাঁধে নিয়ে নেন কোনও রাষ্ট্রদূত তাহলে বিষয়টি অন্যরকম সুখকর হয়ে যায়।

উজ্জীবিত এবং ধীশক্তির অধিকারী একজন কূটনীতিক তিনি, বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণ এবং অক্ষুণ্ন রাখার উদ্দেশ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় নানা কিছু উপস্থাপনা করে চলেছে প্রায় তিন বছরজুড়ে। পারস্পরিক বন্ধুত্বমূলক সম্পর্কের উন্নয়নের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়ায় সাংস্কৃতিক যে মেলবন্ধন সৃষ্টি করেছেন, তাকে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশী বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক কূটনীতির যাদুকর বলছেন। একের পর এক দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় গণমাধ্যমগুলোতে দেশের কথা শুধু তুলে ধরছেন না, ইতিবাচক কাজের জন্যই প্রায়শই প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় শিরোনাম হচ্ছেন অতুলনীয়ভাবে।

সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় আরিরাং টেলিভিশনে বাউল গানের একটি ডকুমেন্টারি অনুষ্ঠানেও আমার দেশের মাটি, তোমার তরে ঠেকাই মাথা এই গান গেয়ে তাক লাগান টিভি উপস্থাপককে, রাষ্ট্রদূতের কন্ঠে গান শুনে উপস্থাপক লী জং অবলীলায় বলে উঠলেন রিয়েলি বিউটিফুল ভয়েস।

Travelion – Mobile

কূটনীতির ম্যাজিক্যাল প্রবাদ পুরুষ বলা হয়, অষ্ট্রিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মেটারনিক ও জার্মানির বিসমার্ককে। আধুনিককালে মানুষে মানুষে, জাতিতে জাতিতে, দেশে দেশে বাংলাদেশের কূটনীতিক সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করছে মেধাবী, চৌকস, তীক্ষ্ণধী রাষ্ট্রদূতবৃন্দ,এদের মধ্য অনেকেই দাবী করছেন দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক কূটনীতির যাদুকর হয়ে উঠেছেন পেশাদার কূটনীতিক আবিদা ইসলাম।

দক্ষিণ কোরিয়ায় তিনি হলেন কূটনীতির আর্ট, অনেকেই এই কূটনীতিকের কন্ঠের প্রশংসা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসার নহর খুলেছেন, রাষ্ট্রদূতের কন্ঠের গানটি শেয়ারের ব্যাপকতা ছুঁয়েছে। সত্যিকার অর্থে কূটনীতির যুগ-যন্ত্রনা উপলব্ধি করেন বলেই জটিলতর বিষয়ও সসহজভাবে মেলে ধরেন, যা হয়ে ওঠে সাবলীল ও প্রানবন্ত। তাই রাষ্ট্রদূতের এই কর্মসৌন্দর্য্যকে সুন্দর, টাচি, প্রাণখোলা অগণন কূটনীতির বিউটির প্রয়াস বললেই অত্যুক্তি হবে না।

দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম সেরকমটিই করছেন। ২০১৭ সালে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে ১৫তম বিসিএস ব্যাচের পররাষ্ট্র ক্যাডারের এই কর্মকর্তা ‘ক্যারিয়ার ডিপ্লোমেসির’ বাইরে বাংলাদেশি সংস্কতিকে ভিনদেশি মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটাও করছেন অত্যন্ত নিখুঁতভাবে। তাঁর সুরের মুর্ছনা একদিকে যেমন মোহিত করছে দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদের অন্যদিকে ধন্য করছে প্রবাসী বাঙালিদেরকে।

শৈশব থেকেই সুর আর স্বরের সঙ্গে সখ্যতা আবিদা ইসলামের। সুরের মায়াজালে আকৃষ্ট হয়ে গানকে জীবনের ধ্যান-জ্ঞান-ব্রত হিসেবে বেছে নিয়েছেন। সুরের মুর্ছনায় মানুষকে মোহিত করার পাশাপাশি পেশাদার কূটনীতিকের পরিচয়ে এই জগতে পার করেছেন জীবনের ২৫টি বছর। কূটনীতিকের দায়িত্ব নিয়ে কলকাতা, লন্ডন, কলম্বো ও ব্রাসেলসসহ যেখানেই গেছেন সেখানেই বাংলাদেশি সংস্কৃতিতে ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে সুনাম কুড়িয়েছেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের এক সময়ের তালিকাভুক্ত গুণী এ শিল্পী।

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কূটনীতির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কূটনীতি চালিয়ে গেছেন তিনি সমানতালে। বিদেশে সফলভাবে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ইমেজটা তিনি তুলে ধরতে পেরেছেন। শৈশব থেকেই তাঁর শিল্পীসত্তা এমনভাবে বিকশিত হয়েছে যে ‘কূটনীতিক’ আবিদা ইসলামের পাশাপাশি যে কেউ অবলীলায় তাঁকে ডাকতে পারেন ‘শিল্পী’ আবিদা ইসলাম নামেও।

ও আমার দেশের মাটি, তোমার তরে ঠেকাই মাথা কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম গান পরিবেশনা করছেন,দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় টেলিভিশন আরিরাংয়ে…

Posted by AkashJatra on Tuesday, October 20, 2020

পেশাদার কূটনীতিক হিসেবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সাথে দূতাবাস পরিচালনা করছেন তিনি। আবেগ ও শিল্পীসত্তাকে তো কোনও নিয়মের সীমানায় আটকে রাখা যায় না কিংবা কোনও ফ্রেমে ব্রাকেটবন্দী করা যায় না। তাই কূটনৈতিক জীবনে শত ব্যস্ততার মাঝেও দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করছেন যা প্রবাসীদেরকে প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা আর সাহস যোগাচ্ছে।

পহেলা বৈশাখ উদযাপন হোক আর রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী, জাতির জনকের জন্মদিন, নারী দিবস ও বসন্ত বরণ হোক সুর যেন এই রাষ্ট্রদূতের নিত্যকার সারথী এবং প্রতিক্ষণের আরাধনা। মোদ্দা কথা, প্রতিটি অনুষ্ঠানেই তাক লাগানো ঘটনার সূচনা করেন রাষ্ট্রদূত নিজেই। প্রতিবারেই একেবারে ভিন্ন আমেজে। এসব অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত শিল্পীদের পাশাপাশি নিজেও সুরের মুর্ছনা তৈরি করেন। তাঁর মিষ্টি ও সুরেলা কন্ঠে গান শুনে মোহিত হন উপস্থিত দর্শকরা।

বছর খানেক আগে সিউলে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে ১৪২৬ পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতসহ প্রবাসী বাংলাদেশিরা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নিয়ে রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম দারুণ দোত্যনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত গান ‘এসো হে বৈশাখ’ গানটি হারমোনিয়ামে সুর তোলার পাশাপাশি উচ্ছ্বসিত কন্ঠে গেয়ে উঠেন। তাঁর সুরেলা কন্ঠে এ গান শুনে মুগ্ধ হয়ে যান বিদেশী মিশনের কূটনীতিকবৃন্দ এবং কোরিয়ান অতিথিসহ উপস্থিত বাংলাদেশি প্রবাসীরা। এর আগের বছরও একইভাবে হারমোনিয়ামে সুর তোলে ‘ধনে ধান্য পুস্প ভরা আমাদের বসুন্ধরা’ গানটি গেয়ে আগত দর্শকদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন রাষ্ট্রদূত।

সিউলে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগেপহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে সমবেত সংগী রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম
সিউলে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগেপহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে সমবেত সংগী রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম

সুরে সুরে গত বছর দূতাবাসের উদ্যোগে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৭তম ও জাতীয় কবির ১১৯তম জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে কোরিয়ান শিল্পী লি ইয়াং সিকের সঙ্গে রাষ্ট্রদূত দ্বৈতকণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের ‘বড় আশা করে এসেছি গো কাছে ডেকে লও’ গেয়ে দর্শকদের বিস্মিত করেন।

সংস্কৃতির এই সেতুবন্ধনে বার বার কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ হন কোরিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা এবং কোরিয়ান নাগরিকরা। তাছাড়া, মুজিবনগর দিবস ও জাতির জনকের জন্মবার্ষিকীতে গান গেয়ে তাক লাগান এই রাষ্ট্রদূত। নানান সময়ে দূতাবাসের অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বিনিময়ের আসা রাষ্ট্রদূতরাও বিস্মিত ও আবেগে আপ্লুত হন তাঁর সুরের মুর্ছনায়।

দক্ষিণ কোরিয়ায় নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় ও বৈশাখের আনন্দ ভাগাভাগি করার ক্ষেত্রে যে অনন্য আয়োজনের নজির রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম করেছেন তা কোরিয়ার বুকে বাংলাদেশের এক প্রাণের গল্প। তানসেনের কথা কে না জানি আমরা। গান গেয়ে তিনি নাকি বৃষ্টি নামাতেন। সুরের টানে ও সুরের মধ্য দিয়ে পরওয়ারদেগারের সঙ্গে নিজের সম্পর্কসূত্র আবিস্কারের চেষ্টা করেছেন ছেউড়িয়ার লালন ফকির।

একইভাবে কোরিয়ায় ভিনদেশি ও বাংলা ভাষাভাষী মানুষদেরকে সুরের মুর্ছনায় মোহিত করেন রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম নিজেই। একইভাবে সিউলে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদেরকে নানা অনুষ্ঠানে গান শুনিয়ে মুগ্ধ করেন তিনি। সুরের মর্ছনায় আন্দোলিত ও আপ্লুত করার পাশাপাশি কূটনীতির বর্ণিল ম্যাপ তৈরি করেন তিনি। আবিদা ইসলাম সাংস্কৃতিক কূটনীতির যে ধারা সৃষ্টি করেছেন তা বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়।

এই রাষ্ট্রদূতের মতে, সংগীত যেভাবে মানুষকে আকর্ষণ করে অন্য কোন স্বর-শব্দই তা পারে না। এভাবেই বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে এবং লাল সবুজের বাংলাদেশকে নিজ কাঁধে ফেরি করছেন রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!