অটোমেশনে শাহ আমানত বিমানবন্দরের কাস্টমস

কমবে যাত্রীদের ভোগান্তি, ঠেকানো যাবে শুল্কফাঁকি, জালিয়াতি

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদেশ থেকে পণ্য নিয়ে আসা যাত্রীরা ভোগান্তি ছাড়াই শুল্ক কর পরিশোধ করে দ্রুত পণ্য ছাড় নিতে পারবেন। পাশাপাশি ঠেকানোও হবে আমদানির পণ্যের শুল্কফাঁকি কিংবা জালিয়াতি। আর এই সুফল আসবে বিমানবন্দরে কার্গো শাখায় কাস্টমসের অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি।

রোববার (২৭ অক্টোবর) শাহ আমানত বিমানবন্দরে সনাতন পদ্ধতিতে পণ্য ছাড়ের বদলে কাস্টমসের অনলাইন সিস্টেম অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ডের মাধ্যমে পণ্য ছাড়ের প্রক্রিয়া চালু করা হয়। চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম স্বয়ংক্রিয় এ পদ্ধতির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন কাস্টম হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার কাজী মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব হাসান, উপ কমিশনার মো. রিয়াদুল ইসলাম, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের সহকারী পরিচালক তানভীর আহমেদ, শাহ আমানত বিমানবন্দরের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক খায়রুল কবীর, সোনালী ব্যাংক বিমানবন্দর শাখার ব্যবস্থাপক মো. তৌহিদুল গণি চৌধুরী, শাহ আমানতের কার্গো তত্ত্বাবধায়ক কাজী খায়রুল কবির, চট্টগ্রাম কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু ।

Travelion – Mobile

এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কাস্টম কমিশনার ফখরুল আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরটিতে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেম বা অটোমেশন সিস্টেম চালু হলো। এতে ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন নিশ্চিত করার পাশাপাশি রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করবে এবং বিদেশফেরত যাত্রীদের পণ্যসামগ্রী পাওয়ার ক্ষেত্রে ভোগান্তি লাঘব হবে। কমবে বিমানবন্দরের জালিয়াতি ও পণ্যজট।

শাহ আমানত  বিমানবন্দরে  কার্গো ভিলেজে অটোমেশন ব্যবস্থার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কাস্টম কমিশনার ফখরুল আলম
শাহ আমানত বিমানবন্দরে কার্গো ভিলেজে অটোমেশন ব্যবস্থার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কাস্টম কমিশনার ফখরুল আলম

কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সূত্র জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্য, ভারতসহ আন্তর্জাতিক গন্তব্যগুলো থেকে প্রতি সপ্তাহে ২শোর বেশি আমদানি চালান শাহ আমানত বিমানবন্দরে থেকে ছাড় হয়। সাপ্তাহিক একটি কার্গো উড়োজাহাজ পাশাপাশি নিয়মিত বাণিজ্যিক ফ্লাইটেও প্রচুর পণ্য আসে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বিমানবন্দরে।

কার্গোতে আসা প্রবাসী যাত্রীদের সরাসরি পণ্যে বেশি নয়। মুলতঃ চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজার কেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরাই প্রবাসী যাত্রীদের নামে এসব পণ্য আমদানি করেন। প্রবাসী যাত্রীরা নির্ধারিত ব্যাগেজ রুলের বাইরে কার্গোর মাধ্যমে তেমন কোন পণ্য আমদানি করেন না ।

অভিযোগ আছে, এক পণ্যের নামে অবৈধ ও উচ্চ শুল্কের পণ্যের নিয়ে আসাসহ চোরাচালানের অনেক ঘটনা ঘটে। কাস্টমস, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও বিমানবন্দরের কিছু কর্মচারীর যোগসাজসেই এমন ঘটনা হয়ে থাকে বলে জানা যায় এই চক্রের সাথে জড়িত।

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে কাস্টমসের উপ কমিশনার রিয়াদুল ইসলাম আকাশযাত্রাকে বলেন, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি চালুর ফলে কোন পণ্যের রাজস্ব পরিশোধের জন্য কাস্টমস হাউসে যেতে হবে না। বিমানবন্দর শাখার সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমেই রাজস্ব পরিশোধ করতে পারবেন যাত্রীরা। এতে যাত্রী ও ব্যবসায়ীর পণ্য চালান-খালাস দ্রুত করা যাবে।

অন্যদিকে চালান-খালাসের ক্ষেত্রে জালিয়াতি রোধ হবে। রাজস্ব আহরণ বাড়বে, বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের পণ্যপ্রাপ্তিতে ভোগান্তি কমবে। একইসাথে বিমানবন্দরের পণ্যজটও কমে যাবে বলে জানান তিনি।

কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ দারাশিকো আকাশযাত্রাকে বলেন, এতদিন ছাড় হওয়া চালানের কোন রেকর্ড আমরা করতে পারতাম না। নতুন এই পদ্ধতির মাধ্যমে পণ্য ছাড়ের রেকর্ড থাকবে। আর শুল্ক পরিশোধ হয়েছে কিনা নিশ্চিত হয়েই পণ্য ছাড় দেয়া সম্ভব হবে।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে জেটিতে আমদানি পণ্য ছাড়ে যে স্বচ্ছতা আছে বিমানবন্দরের কার্গো শাখায়ও সেই স্বচ্ছ্বতা নিশ্চিত হবে, প্রত্যাশা করছেন এই কর্মকর্তা।

শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার সরওয়ার ই জামান বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী বিমানবন্দরগুলোতে কাস্টমস ব্যবস্থার আধুনিক ও ডিজিটালাইজেশনের যে যুগের সূচনা হয়েছে এই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির চালুর মধ্য দিয়ে আমরাও আরও একধাপ এগিয়ে গেলাম। এই বিমানবন্দরে দিয়ে বিদেশফেরত যাত্রীদের আমদারি করা পণ্যে ছাড়ের কোন ধরণের জটিলতা থাকবে না বলে আমরা মনে করছি।’

চট্টগ্রাম কাস্টমসের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক গোলাম রাব্বানী রিগ্যান বলেন, ‘এটা পদ্ধতি চালুর দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের। কিন্তু সোনালী ব্যাংকের কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছিল না। এখন আর কোন বাধা রইল না।’

তিনি মনে করেন, এতে বিমানবন্দরের কাজ সেখানেই করা সম্ভব হবে, কাস্টম হাউসে আসতে হবে না। শুল্কায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে, রাজস্ব ফাঁকি হবে না এবং কাজের গতি বাড়বে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!