২৪ লাখ টাকায় ইতালিতে গিয়ে লাশ হল বাংলাদেশি যুবক

অবৈধভাবে লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন মাদারীপুরের রফিকুল ব্যাপারীর (২২)। ইতালিতে পৌঁছানোর পর রফিককে সেখানকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

বুধবার বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টায় ইতালির হাসপাতাল থেকে মুঠোফোনে পরিবারের কাছে খবর আসে রফিকুল আর বেঁচে নেই। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন তার বাবা হাবিব ব্যাপারী।

ইতালির সব খবর জানতে, এখানে ক্লিক করে আকাশযাত্রার ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকার অনুরোধ

Travelion – Mobile

তিন দিন আগে হাসপাতালের শয্যা থেকে রফিকুল বলেছিলেন ‘বাবা, আমার অবস্থা ভালো না। আমি মনে হয় বাঁচব না। তোমাদের স্বপ্ন আমি পূরণ করতে পারলাম না।

সেই সময় রফিকুলআরও বলেছিল,’আব্বা আমিও মরলাম তোমাগোও মাইরা গেলাম! বাবা তোমরা ভালো থেকো। সবাইকে দেখে রাইখো।’

এটাই ছিল বাবার সঙ্গে শেষ কথা। এরপর রফিকুলের সঙ্গে তাঁর পরিবারের আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।

ছেলের মৃত্যুতে বাবা–মায়ের আহাজারি থামছেই না।
ছেলের মৃত্যুতে বাবা–মায়ের আহাজারি থামছেই না।

রফিকুলের বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের শ্রীনদী এলাকায়। চার ভাইবোনের মধ্যে একমাত্র ভাই রফিকুল। বাবা হাবিব ব্যাপারী স্থানীয় বাজারের চায়ের দোকানদার।

রফিকুলের পরিবার জানায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে স্থানীয় দালাল আলমগীর খাঁর মাধ্যমে সাড়ে চার লাখ টাকায় বাংলাদেশ থেকে দুবাই হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছান রফিক। এরপর লিবিয়ার মাফিয়াদের বন্দিশালায় রফিকের কষ্টের জীবন শুরু হয়। টাকার জন্য দালালদের নির্যাতন সইতে হয় তাঁকে। মুক্তিপণের জন্য দালালের মাধ্যমে কয়েক দফায় প্রায় ১৯ লাখ টাকা লিবিয়া পাঠান বাবা হাবিব ব্যাপারী।

আগের খবর : ইতালিতে নারী পুলিশ ধর্ষণে গ্রেপ্তার বাংলাদেশির পরিচয় মিলেছে

চলতি মাসের শুরুতে রফিকুলসহ শতাধিক তরুণকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি উপকূলে পাঠায় দালাল চক্র। কিন্তু সাগর পাড়ি দেওয়ার সময় রফিকুলসহ অন্তত ১৫ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। ইতালির পুলিশ তাঁদের জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করে। এর মধ্যে রফিকুল আজ মারা যান।

Diamond-Cement-mobile

অভিযুক্ত দালাল আলমগীর খাঁর বাড়ি পাশের ধুরাইল ইউনিয়নের হোসেনের হাট এলাকায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলমগীর এলাকায় থাকেন না। তাঁর পরিবারের সদস্যরাও বাড়িতে নেই। ফাঁকা বাড়ি পড়ে আছে। তাঁর মুঠোফোন নম্বরে কল দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

রফিকুলের বাবা হাবিব ব্যাপারী বলেন, ‘একমাত্র পোলাডারে ইতালি পাঠাইতে কয়েক ধাপে ধারদেনা ও জমি বেইচা ২৪ লাখ টাকা দালালের কাছে দিই। দালালরে হাতজোড় কইরা অনুরোধ কইরা কইছিলাম, পোলাডারে যেন ভালোমতো ইতালি পৌঁছাইয়া দেয়। পোলা ইতালিতে পৌঁছাল ঠিকই, কিন্তু লাশ হইয়া গেল’।

‘দালাল আমাগো কথা শোনে নাই। লিবিয়ায় ওর লোকজনের কারণে আমার পোলাডারে নির্যাতন সইতে হয়। দালালের নির্যাতনের কারণেই আমার পোলাডা মইরা গেল।’

আরও পড়তে পারেন : জর্জিয়া মেলোনিকে শেখ হাসিনার অভিনন্দন

রফিকুলের বাড়িতে এখন শোকের মাতম। একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে মা-বাবাসহ বাড়ির সবাই বাকরুদ্ধ। স্বজন-প্রতিবেশীরা তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

রফিকুলের বড় বোন রাবিয়া বেগম একটু পরপর নিজের মুঠোফোনে ভাইয়ের ছবি বের করে কাঁদছেন।

তিনি বলেন, ‘আমার ভাইকে খুব নির্যাতন সইতে হইছে। ঠিকমতো খাইতে দিত না। লিবিয়া থিকাই ভাইডা আমার অসুস্থ ছিল। সারা দিন রোদের মধ্যে সাগরে থাকায় ভাইডা আরও অসুস্থ হইয়া পড়ে।

আগের খবর : ইতালিতে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব নতুন মন্ত্রীপরিষদ

‘ভাইর স্বপ্ন ছিল ইতালি যাবে। ওখানে গিয়া আয় কইরা আমাগো সংসারের হাল ধরবে। ভাইডা আমার ইতালি ঠিকই পৌঁছাল, কিন্তু বাঁচল না। সরকারের কাছে দাবি, ভাইডার লাশ যেন দ্রুত দেশে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে দেয়।’
সূত্র : প্রথম আলাে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!