লেবানন চলুক ফ্রান্সের শাসনে, হাজার হাজার নাগরিকের প্রত্যাশা!

বৈরুত বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর লেবাননে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ বাড়ছে। লেবানিজরা আগামী ১০ বছরের জন্য লেবাননকে ফ্রান্সের অধীনে দেখতে চেয়ে একটি অনলাইন পিটিশন শুরু করেছে। শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত এতে প্রায় ৬০ হাজার জন স্বাক্ষর করেছেন৷ avaaz.com নামের একটি ওয়েবসাইটে এই পিটিশন শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) রাজধানীর বৈরুতে ব্যাপক বিস্ফোরণের পর পুরো এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। তারপরই ফরাসী শাসনের অধীনে রাষ্ট্র পরিচালনার দাবি জোরালো হয়েছে লেবাননে।

জার্মানভিত্তিক ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, লেবাননে বর্তমানে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট চলছে। সেই সঙ্গে অব্যাহতভাবে বাড়ছে রাজনৈতিক সংকট। এসবের জন্য দেশটির রাজনীতিবিদদের দায়ী করছেন সাধারণ মানুষ। পিটিশনে বর্তমান প্রেক্ষাপট তুলে ধরে দেশে ফরাসি শাসন কার্যকরের দাবি জানানো হয়।

Travelion – Mobile

পিটিশনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনায় লেবাননের শাসকরা চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদ, বিদ্রোহী সংকটে পর্যুদস্ত দেশটি ধ্বংসের কিনারে দাঁড়িয়েছে। আমাদের বিশ্বাস স্বচ্ছ এবং স্থায়ী সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনে লেবাননের উচিৎ ফ্রান্সের শাসনে ফিরে যাওয়া।’

বৃহস্পতিবার বিধ্বস্ত লেবানন পরিদর্শনে আসেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। পায়ে হেটে পরিদর্শন করেন বৈরুতের দুর্ঘটনাস্থল। সঙ্গে ছিলেন লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন। দুর্ঘটনার পররপই ত্রাণ ও উদ্ধারকারী বাহিনীর সঙ্গে লেবাননে আসেন ম্যাক্রোঁ। তারপরই পপুলার পিটিশনের বিষয়টি শুরু হয়।

লেবাননে ফরাসি প্রেসিডেন্টের সফর ব্যাপক উচ্ছ্বাসের সঙ্গে স্বাগত জানান দেশটির সাধারণ মানুষ। ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়া ফরাসি সহযোগিতা সরকারের মাধ্যমে না দিয়ে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠেনর মাধ্যমে বিতরণের আহ্বান জানান তারা। বলেন, রাজনীতিবিদরা দুর্নীতিগ্রস্ত।

১৯২০ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত লেবানন ফ্রান্সের অধীনে ছিল৷ মঙ্গলবারের বিস্ফোরণের পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ লেবানন সফরে এলে বৈরুতের বাসিন্দারা তার কাছে লেবাননের নেতাদের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভের কারণ তুলে ধরেন৷

ফরাসি প্রেসিডেন্ট লেবাননের বাসিন্দাদের জানান, তিনি লেবাননের নেতাদের কাছে ‘একটি নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা’ প্রস্তাব করবেন৷ এরপর ১ সেপ্টেম্বর আবারো লেবাননে আসবেন৷ এই সময়ের মধ্যে লেবাননের নেতারা প্রস্তাব বাস্তবায়ন না করলে তার দায়িত্ব তিনি নেবেন বলে বৈরুতের বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করেন মাক্রোঁ৷

১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চলা গৃহযুদ্ধের পর এখন লেবাননের অর্থনৈতিক অবস্থা সবচেয়ে খারাপ৷ তাই গত অক্টোবরে সে দেশে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়৷ আর্থিক দুরবস্থার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও অদক্ষতাকে দায়ী করেন অনেকে৷ ওই সংকটের মধ্যে করোনা ভাইরাসের মহামারি মোকাবেলা করতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার।

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে বৈরুতের বিস্ফোরণ। এতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১৫০ জন নিহত হয়েছে। আহত ৫ হাজারের বেশি। নিখোঁজ রয়েছে ৬০ জন। গৃহহারা ৩ লাখেরও বেশি মানুষ। আর্থিক ক্ষতি ১৫শ’ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি বলে জানিয়েছে শহর কর্তৃপক্ষ।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!