ভুটান ভ্রমণে বাংলাদেশির জন্য কমেছে ট্যাক্স, যুক্ত হচ্ছে বড় ফ্লাইট
বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য ভুটান ভ্রমণ এবার হতে যাচ্ছে আরও সহজ, সাশ্রয়ী ও আরামদায়ক। দীর্ঘদিন ধরে যেসব প্রতিবন্ধকতা বাংলাদেশিদের ভুটান ভ্রমণে বাধা ছিল—সেগুলোর সমাধানে এগিয়ে এসেছে ভুটান ট্যুরিজম কর্পোরেশন লিমিটেড (বিটিসিএল)। বাড়তি সাসটেইনেবল ডেভলপমন্ট ট্যাক্স (এসডিএফ) ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনার পাশাপাশি, বড় ফ্লাইট চালুর সুযোগ-সুবিধা ঘোষণা দিয়েছে সংস্থাটি।
বাংলাদেশিদের জন্য অন এরাইভাল ভিসা সুবিধা থাকলেও বাড়তি ট্যাক্স, অপর্যাপ্ত ফ্লাইট এবং অনলাইনে টিকিট বুকিং সুবিধা না থাকায়, চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বিপুল পর্যটক ভ্রমণে যেতে পারতেন না। এখন এইসব ভোগান্তি কমানোর উদ্যোগী হয়েছে বিটিসিএল।
এরই অংশ হিসেবে জুন থেকেই ঢাকায় অফিস চালু করে বাংলাদেশিদের জন্য বিশেষ সেবা দিতে প্রস্তুতি নিয়েছে বিটিসিএল। এসডিএফ যাত্রী প্রতি ২শ মার্কিন ডলার থেকে কমিয়ে মাত্র ১৫ ডলার করা হয়েছে, ফলে খরচ অনেকটাই কমে আসবে। জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে বড় ফ্লাইট। ফলে যাত্রী পরিবহন হবে দ্বিগুণ।
শনিবার (১৭ মে) চট্টগ্রামে বিটিসিএল এর সাথে ঢাকার জিটেক এভিয়েশন লিমিটেড এবং চট্টগ্রামের ট্রেফেল ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলসের যৌথ অঅয়োজনের মতবিনিময় সভায় এই ঘােষণা আসে। জিইসি মোড়ের ট্রেফেল ট্যুরসের কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত সভায় অন্তত ২০ জন ট্রাভেল এজেন্ট অংশ নেন।
সভায় বিটিসিএল-এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (ভুটান হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট) চেনচো শেরনিং বলেন, “বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য ট্যাক্স জনপ্রতি ২শ ডলার থেকে কমিয়ে মাত্র ১৫ ডলার করায়- খরচ অনেক কমবে। এখন ঢাকা থেকে থিম্পু (ভুটান) সপ্তাহে দুটি করে মাসে ৮টির মতো ফ্লাইটে যাত্রী পরিবহন হয় । সবগুলোই ৪০ আসনের ছোট ফ্লাইট। জুলাই মাস থেকে মাসে আমরা ৪টি এয়ারবাস দিয়ে যাত্রী পরিবহন শুরু করছি। ফলে একসাথে ১২০ যাত্রী ভুটান নেয়া সম্ভব হবে। আশা করছি এর মাধ্যমে আগের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি যাত্রী আমরা বাংলাদেশ থেকে পাবো।”
বাংলাদেশি পর্যটকদের সার্বিক সহযোগিতা দিতে বিটিসিএল-এর সাথে কাজ করছে জি টেক এভিয়েশন লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ তানভীর আহমেদ বলেন, “বাংলাদেশি পর্যটকদের ফ্লাইট টিকেট বুকিং, ট্যুর প্যাকেজ, পর্যটকদের যাবতীয় সমস্যা দেখার আগে কোন অফিস ছিল না। এখন ঢাকায় একটি অফিস খুলেছে ভুটান ট্যুরিজম কর্পোরেশন। ফলে আগের চেয়ে বেশি পর্যটক বাংলাদেশ থেকে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। একেবারে অর্গানিক ন্যাচার যারা ভালােবাসেন তাদের জন্য সেরা গন্তব্য ভুটান।”
সভায় জানানো হয়, বর্তমানে ড্রুক এয়ার ঢাকা থেকে মাসে ৩২০ জন যাত্রী পরিবহন করতে পারে। জুলাই থেকে সেই সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৬শ জনে উন্নীত হবে। আর ২০২৬ সালে তিন লাখ পর্যটক আনার লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে ভুটান সরকার। এর একটি অংশ বাংলাদেশ থেকে আনতে চায় ভুটান সরকার।
সভায় বক্তারা ড্রুক এয়ারের পাশাপাশি বাংলাদেশি এয়ারলাইনগুলোকে ভুটানে ফ্লাইট চলাচলে অনুমতির দাবি জানান। বিটিসিএল কর্মকর্তারা স্বীকার করে অন্য এয়ারলাইনসকে ফ্লাইট পরিচালনা করতে দিলে ভাড়া কমে আসবে। এজন্য ভুটানে নতুন বিমানবন্দর চালু পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন; যেটি ২০৩০ সাল নাগাদ চালু হতে পারে।
ট্রেফেল ট্রাভেল এন্ড ট্যুরসের ম্যানেজার মোহাম্মদ মামুন বলেন, “ঢাকা-ভুটান ফ্লাইট পরিচালনা করছে কেবল ভুটানভিত্তিক সরকারী এয়ারলাইনস ড্রুক এয়ার। এখানে বাংলাদেশি এয়ারলাইনসে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিলে প্রতিযোগিতার কারণে টিকেট ভাড়া অনেক কমে আসবে। আর অনলাইনে ফ্লাইট টিকেট বুকিং সুবিধা না থাকায় অনেক পর্যটককে ভুটান ভ্রমনের সুবিধা আমরা দিতে পারি না। অনলাইনে টিকেট ইস্যুর ব্যবস্থা নেওয়া এবং টিকেট ভাড়া কমানোর পদক্ষেপ নিলে বাংলাদেশিদের আকর্ষনীয় গন্তব্য হবে ভুটান।
ঢাকা থেকে দেড় ঘন্টার ফ্লাইটে ভুটান যেতে পারছেন বাংলাদেশি পর্যটকরা। ভাড়া আসা-যাওয়ার ভাড়া ন্যুনতম ৪৭ হাজার ৫শ টাকা। তবে গ্রুপগুলোর ট্যুর প্যাকেজে গেলে খরচ অনেক কমে আসে। ট্রাভেল এজেন্সিগুলো ভুটানে তিন রাত-চার দিনের প্যাকেজ দিচ্ছে ১৯ হাজার টাকায়। এই খরচের মধ্যে বিমান টিকেট ছাড়া, থাকা, খাওয়া, এয়ারপোর্ট ট্রান্সফার, ট্যুর গাইড আছে।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন বিটিসিএল এর সিনিয়র ম্যানেজার কান্দু ইয়েতসো, ট্রেফেল ট্রাভেল এন্ড ট্যুরসের কর্মকর্তা ইখতিয়ার উদ্দিন সাবিথ, কর্মকর্তা শৈবাল দাশ গুপ্ত, এস আর ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলসের কর্মকর্তা প্রবাল সাহা, এয়ারবাংলা ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলসের কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইয়াসিন আরাফাত, এয়ার স্টার ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনালের কর্মকর্তা ফারুক হোসাইন, এক্সপো ট্যুরসের ইব্রাহিম খলিল, সাঙ্গু ট্যুরসের এমডি হান্নান, কুহেলিয়া ট্যুরসের সাইফুল কবির প্রমুখ।
বিটিসিএল এর তথ্যমতে, ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ২৮ হাজার ৬৭৪ জন পর্যটক ভুটান ভ্রমন করেছেন ২০২৪ সালের এপ্রিলে এই সংখ্যা ছিল ১৬ হাজারের বেশি। আর ২৮ হাজার ৬৭৪ পর্যটকের মধ্যে সাড়ে ১৫ হাজারই ছিল ভারতীয়। দ্বিতীয় স্থানে আছে আমেরিকান ১৭৩৪ জন, তৃতীয়স্থানে আছে ব্রিটিশ নাগরিক; যার সংখ্যা ৬৯৭ জন। আর পঞ্চমস্থানে থাকা বাংলাদেশি গেছেন ৫৫৯ জন।
সব খবর জানতে, এখানে ক্লিক করে আকাশযাত্রার ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকার অনুরোধ