বোয়িংয়ের যাত্রীবাহী মহাকাশযান মিশন ব্যর্থ!
স্থানীয় সময় শুক্রবার ভোর ৬টা৩৬ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রে ফ্লোরিডা থেকে নতুন মহাকাশযান ‘দ্য স্টারলাইনার’ রকেটে করে সফলভাবেই উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। কিন্তু ৩০ মিনিট পরই এতে যান্ত্রিক গোলাযোগ দেখা দিলে এটি সঠিক পথ থেকে ছিটকে পড়ে এবং থেমে যায়। ফলে সেটি আর আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছাতে পারেনি।
আর এর মধ্যে দিয়ে ব্যর্থ হল বিশ্বখ্যাত উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িংয়ের যাত্রীবাহী মহাকাশযান মিশন। এ মহাকাশযান দিয়ে ‘মহাকাশ ভ্রমণ’র বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছিল বোয়িং কর্তৃপক্ষ। অবশ্য শুরুতেই যাওয়ার কথা রয়েছে বিজ্ঞানীদের। সে লক্ষ্যেই চালানো হয় এই পরীক্ষা।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টারে স্টারলাইনার নিয়ে সংবাদ সম্মলনে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, ‘স্টারলাইনার এর উৎক্ষেপণকারী রকেট থেকে আলাদা হওয়ার পর নিজের ইঞ্জিন চালু করতে গিয়ে খুব বেশি জ্বালানি পুড়িয়ে ফেলেছে। ফলে নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছানোর মতো জ্বালানি অবশিষ্ট নেই তার।’
স্টারলাইনার এখন তার মিশন অসম্পূর্ণ রেখেই পৃথিবীতে ফিরে আসবে বলে জানিয়েছের নাসার প্রশাসক জিম ব্রিডেনস্টাইন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন “আজ সকালে ফ্লোরিডার স্পেস লঞ্চ কমপ্লেক্স ৪১ থেকে নাসা এবং বোয়িং ইউনাইটেড লঞ্চ অ্যালায়েন্স অ্যাটলাস ভি রকেটে (United Launch Alliance Atlas V rocket ) সফলভাবে প্রথম যাত্রীবাহী মহাকাশযান ‘স্টারলাইনার’ উক্ষেপন করেছিল। এই মিশনটি ছিল আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের সঙ্গে স্টারলাইনারের মিলিত হওয়া এবং নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসার। সব কিছুই ঠিকঠাক চলার পরও মহাকাশযানটি পরিকল্পিত কক্ষপথে পৌঁছায়নি এবং এটি আর আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছাবে না।’
নাসা, বোয়িং এবং মার্কিন সেনাবাহিনীর সাথে সমন্বিতভাবে, স্থানীয় সময় রবিবার ( ২২ডিসেম্বর) স্টারলাইনারকে নিউ মেক্সিকোর হোয়াইট স্যান্ডস-এ ফিরে আনার জন্য কাজ করছে,তিনি যোগ করেন।
জিম ব্রিডেনস্টাইন আরও বলেন, ‘মহাকাশযানটিতে বিজ্ঞানীরা থাকলে হয়তো তারা সমস্যার সমাধান করতে পারতেন এবং মিশন সম্পূর্ণ করতে পারতেন। কিন্তু পরীক্ষামূলক এই উৎক্ষেপণে মহাকাশযানটিকে খালিই পাঠানো হয়েছিলো। এবং পৃথিবী থেকে সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছিল।’
আগামী বছরই ক্রুসহ স্পেস ক্রাফটটি ফের মহাকাশে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে সংবাদ সম্মলনে জানানো হয়।রে স্টারলাইনার নিয়ে সংবাদ সম্মলনে নাসা ও বোয়িং কর্মকর্তারা[/caption]
চলতি সপ্তাহেই ৭৩৭ ম্যাক্স মডেলের উড়োজাহাজ তৈরি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বোয়িং কর্তৃপক্ষ। দুটি ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোয়িং। ঘোষণাটি হতাশার হলেও এর একই সপ্তাহে এসেছে আশার খবর। মহাকাশে উৎক্ষেপণের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত প্রতিষ্ঠানটির ‘সিএসটি-হান্ড্রেড’ স্টারলাইনার মহাকাশযানটি। কিন্তু মিশন ব্যর্থ হওয়ায় আবারও পিছিয়ে পড়তে হল বোয়িংকে।
মিশনের আগে নাসা বাণিজ্যিক ক্রু প্রোগ্রামের ম্যানেজার ক্যাথি লডারাস বলেছিলেন,,যখন কোনো পরিকল্পনায় অক্লান্ত শ্রম দেয়া হয়, এটা আর স্বপ্ন থাকে না। বাস্তবে ধরা দেয়। আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ। আর কয়েকটি ধাপ আছে, যেগুলো শেষ হলেই এ মহাকাশযান মহাকাশের উদ্দেশে রওনা হতে পারবে।
প্রসঙ্গতঃ বাণিজ্যিকভাবে মহাকাশে যান পাঠানোর পরিকল্পনা করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৬৮০ কোটি ডলার দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল এরোনোটিক্স অ্যান্ড স্পেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। যেন প্রতিষ্ঠানগুলো রকেট এবং ক্যাপসুল সিস্টেম বানাতে পারে।
তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি স্পেস ক্রাফট দিয়ে মানুষকে মহাকাশ অভিযানে নিয়ে যেতে পারবে নাসা। স্পেসএক্স এখনো মানুষ নিয়ে মহাকাশে যেতে সক্ষম হয়নি। আর ২০১১ সালেই শাটল প্রকল্প বন্ধ করে দেয় নাসা। বর্তমানে রাশিয়া এ সেবা দিলেও মহাকাশ যাত্রায় প্রতি সিটে গুণতে হবে ৮ কোটি ডলার।
ভিডিও দেখুন, সৌজন্যে : নাসা
বোয়িংয়ের যাত্রীবাহী মহাকাশযান 'দ্য স্টারলাইনার' পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ
Posted by AkashJatra on Saturday, 21 December 2019