“বাংলাদেশিদের আত্মত্যাগ ও অবদান কুয়েত কখনো ভুলবে না”

বিচারমন্ত্রী নাসের আল-সুমাইত

কুয়েতের বিচারমন্ত্রী নাসের ইউসুফ মোহাম্মদ আল-সুমাইত বলেছেন “নৃশংস ইরাকি আক্রমণের সময় বাংলাদেশিদের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা কুয়েতিদের স্মৃতিতে অম্লান রয়েছে। ল্যান্ডমাইন পরিষ্কারে বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রচেষ্টা এবং তাদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করি, যাদের মধ্যে প্রাণ হারানো ব্যক্তিরাও ছিলেন। কুয়েত এই অনুগ্রহ কখনো ভুলবে না। আমাদের সরকার ও জনগণ উভয়ের হাত সর্বদা বাংলাদেশিদের প্রতি প্রসারিত।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাজধানী কুয়েত সিটির ক্রাউন প্লাজা হোটেলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪তম দিবস এবং জাতীয় দিবস উদযাপনের জমকালো সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মন্ত্রী কুয়েতে বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের অবদানের প্রশংসা করে উল্লেখ করেন যে, দেশের তৃতীয় বৃহত্তম প্রবাসী গোষ্ঠী, যার সংখ্যা ৩ লাখেরও বেশি।

Travelion – Mobile

আল-সুমাইত কুয়েত-বাংলাদেশ দুই ভ্রাতপ্রতীম দেশের মধ্যে গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন,’এটি পাঁচ দশক ধরে চলমান একটি অংশীদারিত্ব।’

কুয়েতের বিচারমন্ত্রী নাসের আল-সুমাইত ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল সৈয়দ তারেক হোসেন কেক কাটেন।
কুয়েতের বিচারমন্ত্রী নাসের আল-সুমাইত ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল সৈয়দ তারেক হোসেন কেক কাটেন।

কুয়েতের বিচার ব্যবস্থার সংস্কার সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে, আল-সুমাইত মহামান্য আমির শেখ মেশাল আল-আহমদ আল-জাবের আল-সাবাহর নির্দেশ অনুসারে বিচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত সাম্প্রতিক পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন।

“সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে তাঁর সফরকালে মাননীয় আমিরের রমজানের ভাষণ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, আমরা তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিকে নতুন বিচারিক সংস্থা আইনে রূপান্তরিত করেছি। এই বিস্তৃত আইনটিতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার রয়েছে এবং বর্তমানে আইনি পরামর্শ ও আইন বিভাগে এর চূড়ান্ত খসড়া তৈরির পর্যায়ে রয়েছে। আমরা কয়েক মাসের মধ্যে এটি সম্পন্ন হওয়ার আশা করছি”, তিনি প্রকাশ করেন।

কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল সৈয়দ তারেক হোসেন জানান, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর কুয়েতই প্রথম উপসাগরীয় দেশ যা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৭৪ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশ ও কুয়েত রাজনৈতিক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, জনশক্তি, কৃষি, শিক্ষা এবং প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দৃঢ় সহযোগিতা উপভোগ করেছে।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক কোরের সদস্য, উচ্চপদস্থ কুয়েতি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক কোরের সদস্য, উচ্চপদস্থ কুয়েতি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, কুয়েতের মহামান্য আমির শেখ মেশাল আল-আহমদ আল-জাবের আল-সাবাহর গতিশীল নেতৃত্বে এবং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দূরদর্শী নেতৃত্বে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অব্যাহতভাবে সমৃদ্ধ হবে এবং নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।

Diamond-Cement-mobile

রাষ্ট্রদূত আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতে উল্লেখযোগ্য অর্জন উল্লেখ করে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য যাত্রার কথাও তুলে ধরেন। “সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাম্প্রতিক অর্জন বাংলাদেশকে একটি ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে,” রাষ্ট্রদূত বলেন।

তিনি ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে মাসে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের কথাও উল্লেখ করেন এবং একটি ন্যায়সংগত, স্বচ্ছ, এবং জবাবদিহিমূলক সমাজের আকাঙ্ক্ষা সমুন্নত রাখতে এবং দেশে গণতান্ত্রিক রীতিনীতিকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে এর ভূমিকার উপর জোর দেন।

অনুষ্ঠানে উচ্চপদস্থ কুয়েতি কর্মকর্তা, বাংলাদেশ সামরিক কন্টিনজেন্টের সদস্যরা
অনুষ্ঠানে উচ্চপদস্থ কুয়েতি কর্মকর্তা, বাংলাদেশ সামরিক কন্টিনজেন্টের সদস্যরা

ঢাকায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলনের উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত জানান, যেখানে ৫০টি দেশের ৪১৫ জন প্রতিনিধি অংশ নিয়েছিলেন।

রাষ্ট্রদূত কুয়েত এবং অন্যান্য বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলিকে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করার এবং পারস্পরিক প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধিতে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান।

তিনি বাংলাদেশের পর্যটন খাতের সম্ভাবনার ওপর জোর দেন, এটিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং উষ্ণ আতিথেয়তার দেশ হিসেবে চিত্রিত করেন। তিনি সবাইকে বাংলাদেশ সফর করতে এবং এর মোহনীয়তা অনুভব করতে উৎসাহিত করেন। রাষ্ট্রদূত তার সমাপনী বক্তব্যে কুয়েতে প্রবাসী বাংলাদেশি সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের উন্নয়নে আন্তরিকভাবে অবদান রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক কোরের সদস্য, উচ্চপদস্থ কুয়েতি কর্মকর্তা, বাংলাদেশ সামরিক কন্টিনজেন্টের সদস্য, বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের সদস্যসহ ৪০০ জনেরও বেশি অতিথি উপস্থিত ছিলেন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দূতাবাসের নারী কর্মী ও গৃহীণীদের তৈরি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলির পসরা দেখে অতিথিরা যেমন অবাক হন, তেমনি তৃপ্তির সাথে স্বাদও গ্রহন করেন। সেই সঙ্গে জানতে পারেন বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কেও।

সব খবর জানতে, এখানে ক্লিক করে আকাশযাত্রার ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকার অনুরোধ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!