প্রায় আড়াই হাজার কর্মী ছাটাই করবে এয়ারবাস

বড় অর্থনৈতিক মন্দায় বিমাননির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস। তাই তাদের জার্মানভিত্তিক সহযোগি প্রতিষ্ঠান ডিফেন্স এন্ড স্পেসকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করেছে তারা। এরই অংশ হিসেবে সেখানকার বিভিন্ন পদে কয়েক হাজার কর্মীকে ছাটাই করা হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

সম্প্রতি এয়ারবাস তাদের এক আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় জানায়, আগামী দুই বছরে ডিফেন্স ও স্পেস বিভাগে ২ হাজার ৩৬২ জনকে ছাটাই করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তারাই অংশ হিসেবে ইউরোপীয় বহুজাতিক এই এ্যারোস্পেস প্রতিষ্ঠানটি জার্মানিতে ৮২৯ জনকে, স্পেনে ৬৩০ জনকে, ফ্রান্সে ৪০৪ জনকে এবং ব্রিটেনে ৩৫৭ জনকে চাকরিচ্যুত করবে। এছাড়াও ইউরোপের বাইরে অন্য দেশে আরও ১৪২ টি ছাটাই করা হবে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

স্পেস মার্কেটে লোকসান ও সামরিক বিভাগে বিভিন্ন অর্ডার পিছিয়ে যাওয়ার কারণে তারা এই মহাছাটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।

Travelion – Mobile

প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, এর পুনর্গঠন সম্পর্কিত যাবতীয় প্রক্রিয়ায় তারা তাদের ইউরোপিয়ান ওয়ার্কস কাউন্সিলের সাথে যৌথভাবে কাজ করছে। এয়ারবাসের ডিফেন্স এন্ড স্পেস বিভাগ এই পরিকল্পনার বিষয়ে নিয়মিত তথ্য প্রতান করবে এবং কর্মচারীদের প্রতিনিধিদের সাথে গঠনমূলক আলোচনা চালিয়ে যাবে বলেও জানিয়েছে।

এয়ারবাসের ডিফেন্স এন্ড স্পেস বিভাগ
এয়ারবাসের ডিফেন্স এন্ড স্পেস বিভাগ

এয়ারবাস জানিয়েছে, ২০১৯ এ তাদের মোট ১.৩৬ বিলিয়ন ইউরো লোকসান গুণতে হয়েছে। মূলত তাদের ঘুষ কেলেঙ্কারি ক্ষতিপূরণে ব্যয় করা ৩.৬ বিলিয়ন ইউরো এবং মিলিটারি এয়ারক্রাফট এয়ারবাস A400M Atlas এর পুনঃউন্নয়ন ব্যয়ের কারণে তাদের এই লোকসান গুণতে হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে ডিফেন্স এন্ড স্পেস বিভাগের প্রধান ডির্ক হোকে রয়টার্সকে জানান, জার্মানি সৌদি আরবে সামরিক রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় এয়ারবাসের এই বিভাগটি অনেক ক্রেতা হারিয়েছে। সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার ঘটনার পরপরই জার্মানি এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে। যেটির কারণে কোম্পানিটিকে ২২১ মিলিয়ন ইউরো গচ্চা দিতে হয়েছে।

এয়ারবাসে ডিফেন্স ও স্পেস বিভাগটি মূলত ১৫ শতাংশ রাজস্ব যোগ করে। এয়ারবাস জানিয়েছে, “তাদের মৌলিক ব্যবসায়িক নীতির কারণে এই ছাটাই জরুরি। কারণ তাদের বুক টু বিল রেসিও (বিল করা অর্থের পরিমাণের সাথে অর্ডারের অনুপাত) টানা তিন বছর ধরে ১ এর কমে নেমে দাঁড়িয়েছে।

এই বিভাগটি আশা করছিল যে যুদ্ধবিমান এবং সামরিক ড্রোন তৈরি করার ফ্রাঙ্কো-জার্মান প্রকল্পটি চূড়ান্ত হবে। কারণ প্রকল্পটির পরীক্ষামূলক কাজে জার্মানি ৮০ বিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ দিয়েছিল। হোকে প্রাথমিকভাবে এই প্রকল্পের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। যদিও পরে ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপি- জানায়, জার্মানির প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় এ ব্যাপারে এখনও মনস্থির করেনি। তবে শেষমেশ এয়ারবাসের ছাটাইয়ে এই প্রকল্পটিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না এয়ারবাস।

এয়ারবাস-এর এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান গিলাউমে ফাউরই ফরাসি সাপ্তাহিক পত্রিকা লা ট্রিবিউন-কে তাদের পুনর্গঠন করার যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেন, “কেবল কিছু বড় মাপের প্রকল্পের উপর নির্ভর করে আমরা আমাদের মুনাফা নিশ্চিত করতে চাইনা। আমরা চাই, আমাদের স্বাভাবিক নিয়মিত ব্যবসায়িক কর্মকান্ডের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিকে লাভজনক করতে। এইসব বড় চুক্তির উপর আমরা আমাদের নির্ভরতা কমাতে চায়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!