পর্তুগালে ‘১৯৭১ গণহত্যা’ স্মরণ, স্বীকৃতি দাবি
নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংস ও কাপুরুষোচিত হামলার কথা স্মরণ করিয়ে যথাযথ সম্মান ও গাম্ভীর্যের সঙ্গে গণহত্যা দিবস পালন করেছে পর্তুগালের লিসবনে বাংলাদেশ দূতাবাস । এ উপলক্ষে দূতাবাস প্রাঙ্গণে সেমিনার, আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের আয়োজন করা হয়।
২৫ শে মার্চ সন্ধ্যায় দূতাবাসে আয়োজিত “৫২ এ বাংলাদেশ: লুকিং ব্যাক ইন দ্য ফ্রিডম স্ট্র্যাগল অ্যান্ড জেনোসাইড” শীর্ষক সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিভিন্ন পর্তুগিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ, প্রবাসী বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের নেতা এবং দূতাবাসের কর্মকর্তারাঅংশ নেন।
প্রবাসের সব খবর জানতে, এখানে ক্লিক করে আকাশযাত্রার ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকার অনুরোধ
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে সেমিনার শুরু হয়।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারিক আহসান তার বক্তব্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ ও বীরাঙ্গনাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস ধরে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠন অব্যাহত ছিল। সারা বাংলাদেশে গণকবর ও হত্যার ক্ষেত্র ছড়িয়ে আছে এবং এখনও নতুন নতুন আবিষ্কার হচ্ছে।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, যদিও বাংলাদেশে গণহত্যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল, কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এটিকে যথাযথভাবে স্বীকৃতি দেয়নি।
তিনি মনে করিয়ে দেন, বাংলাদেশের গণহত্যার অপর্যাপ্ত স্বীকৃতি বিশ্বজুড়ে গণহত্যার অনেক ঘটনার কারণ বলে মনে করা হয়। তিনি বাংলাদেশের গণহত্যাকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানান যাতে নিহতদের আত্মা শান্তিতে থাকে।
প্যানেল আলোচনায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন লিসবন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক শিব কুমার সিং।
সিং, বাংলাদেশের গণহত্যার অমানবিকীকরণ, নির্মূল এবং অস্বীকারের দিকগুলি বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন এবং মন্তব্য করেছেন যে পাকিস্তানের উচিত ১৯৭১ সালে যা করেছিল তার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া।
তিনি অবিলম্বে বাংলাদেশের গণহত্যাকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান।
আলোচনায় অংশ নিয়ে লিসবন বিশ্ববিদ্যারয়ের ছাত্র সার্জিউ সেনসিউক তার বক্তব্যে কালোরাত্রির নির্যাতিত ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মন্তব্য করেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবিলম্বে বাংলাদেশের জনগণের ওপর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর গণহত্যার স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।
তিনি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের অসামান্য অর্জনের জন্য বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং দেখেন যে বাংলাদেশ বিশ্ব মঞ্চে একটি অবস্থান তৈরি করেছে।
তিনি বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশগুলোর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন যেগুলোকে গণহত্যার আন্তর্জাতিক অপরাধের মুখোমুখি হতে হয়েছে।
সেমিনারে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের গণহত্যার ঘটনা সম্বলিত একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি, আন্তর্জাতিক মিডিয়া দ্বারা ধারণকৃত গণহত্যার যুদ্ধকালীন ফুটেজ এবং বাংলাদেশের গণহত্যার স্বীকৃতির মামলা প্রদর্শন করা হয়।
অতিথিদের মধ্যে “বাংলাদেশ জেনোসাইড রিভিজিটেড” এবং “রিকগনাইজিং দ্য ১৯৭১ বাংলাদেশ জেনোসাইড” শিরোনামের বুকলেট এবং মার্কিন কংগ্রেসে বাংলাদেশের গণহত্যাকে স্বীকৃতি দিয়ে পেশ করা রেজুলেশনও বিতরণ করা হয়।
আলোচনা পর্বে ‘প্রশ্ন ও উত্তর’ সেশনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা প্যানেলিস্টদের বাংলাদেশের গণহত্যা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কর্তৃক গণহত্যার স্বীকৃতি সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন।
সকল অতিথিরা চ্যান্সারি প্রাঙ্গণে একটি মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মিছিলে হেঁটে যান এবং “১৯৭১ গণহত্যা” শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর সামনে মোমবাতি জ্বালিয়ে বাংলাদেশের গণহত্যার শিকারদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
প্রদর্শনীতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী এবং স্থানীয় সহযোগীদের দ্বারা সংঘটিত নৃশংসতার ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করে দর্শনার্থীরা হতবাক হয়েছিলেন।
প্রবাসের সব খবর জানতে, এখানে ক্লিক করে আকাশযাত্রার ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকার অনুরোধ