নাসায় যাচ্ছে বাদাম বেচে সংসার চালানো জয়লক্ষ্মী

ভারতের তামিলনাড়ুর পুডুক্কোত্তাই গ্রামের সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী কে. জয়লক্ষ্মী। বাবা বাড়িতে থাকেন না। মা মানসিক রোগী। আছে ছোট এক ভাই। একমাত্র উপার্জনক্ষম হিসেবে পুরো সংসার চালাতে হয় তাকে।

একাদশ শ্রেণির এই ছাত্রী কাজু বাদাম বেচে, ৮ ম ও ৯ ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পড়িয়ে যা রোজগার হয়, তা দিয়েই সংসার চালায়। এতকিছু করার পরেও সে জোরকদমে চালিয়ে যাচ্ছে পড়াশোনা। আর সেই মেয়েই এবার পাড়ি দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে, সেটাও নাসায়।

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের তাবড় তাবড় বিজ্ঞানীদের সঙ্গে দেখা করতে, কথা বলতে। ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞান প্রিয় বিষয় জয়লক্ষ্মীর। ছোট থেকেই ইচ্ছা ছিল, পরমাণু বিজ্ঞানী এবং ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালামের মতো হবে সে।

Travelion – Mobile

অভাব–অনটন, বাধা–বিঘ্ন থাকলেও নিজের স্বপ্নে একটুও চিড় ধরেনি জয়লক্ষ্মীর। বাবা বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন। ইচ্ছ্ হলে টাকা পাঠান, না-হলে পাঠান না। তাই সংসারের ভার তার ওপরেই। বড় হয়ে বিজ্ঞান নিয়েই পড়াশোনা করবে বলে কোচিং ক্লাস নিয়ে একটু আধটু ইংরেজিও শিখে নিয়েছে জয়লক্ষ্মী।

একেবারেই নিজের চেষ্টাতেই নাসায় গিয়ে মহাকাশচারীদের সঙ্গে দেখা করতে চলেছে সে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২০ সালের মে মাসে নাসায় যাচ্ছে সে। কিভাবে এল এই সুযোগ?

জয়ালক্ষ্মী জানায়, একদিন হঠাৎ করেই কাগজের একটা খবরে চোখ আটকে যায়। একটি সংস্থা নাসা যাওয়ার জন্য সব শিক্ষার্থীদের সুযোগ দিতে একটা প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছে।

খবরটা দেখেই আর বসে থাকতে পারিনি আমি। সব কাজ ফেলে দৌড়ে বাড়ি গিয়ে প্রতিযোগিতার জন্য ফর্ম ফিলআপ করি। নিজের মতো করে বাড়িতেই প্রস্তুতি নিতে থাকি। আর সেই পরীক্ষায় সফলও হই।

তাতেও অবশ্য সব সমস্যার সমাধান হয়নি। সমস্যা এবার অন্য জায়গায়। নাসায় ঢোকার টিকিট তো পেয়ে গেছে, কিন্তু যাতায়াত খরচ! সেও তো অনেক টাকা। কয়েকজন শিক্ষক আর তার সহপাঠীরা মিলে পাসপোর্ট বানিয়ে দিয়েছে তার।

পাসপোর্ট অফিসারও তাকে কিছু টাকা দিয়ে সাহায্য করেছেন। কিন্তু সেটাও যথেষ্ট নয়। জেলা শাসকের কাছেও আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদন জানিয়েছে সে।

ওএনজিসির ডিজিএম কালেক্টর পি উমা মহেশ্বরীর উপস্থিতিতে জয়লক্ষ্মীর হাতে `৬৫ হাজার রূপী  তুলে দেন
ওএনজিসির ডিজিএম কালেক্টর পি উমা মহেশ্বরীর উপস্থিতিতে জয়লক্ষ্মীর হাতে `৬৫ হাজার রূপী তুলে দেন

এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর তিন দিনের মধ্যে জয়লক্ষীর স্বপ্ন পুরণে নাসা ভ্রমণের জন্য পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে এসেছেন অনেকে। ওএনজিসির করাইকালের নামের একটি কোম্পানির কর্মচারীরা নিজেদের বেতন থেকে ৬৫ হাজার টাকা তুলে জয়লক্ষীকে দিয়েছেন। মঙ্গলবার জেলা কালেকটরের কার্যালয়ে এই অর্থ জয়লক্ষ্মীর হাতে হস্তান্তর করা হয়।

কোম্পানিটির এইচআর বিভাগের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জোসেফ রাজ বলেন “আমরা তার গল্প দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছি। আমাদের কর্মীরা একত্রিত হয়ে জয়লক্ষ্মীকে সহায়তা করার জন্য অবদান রাখে। এটি কর্মীদের দ্বারা স্বেচ্ছাসেবী অবদান।”
পুডুকোত্তাইয়ের কান্নি তামিল সংগমের সদস্য এন মুথুনিলাভান বলেন, “জয়লক্ষ্মী কঠোর পথে এগিয়ে এসেছে।সে অত্যন্ত পরিশ্রমী এবং একটি ছোট্ট গ্রাম থেকে এসেছে। শহর জুড়ে লোকেরা তার জন্য তহবিল সংগ্রহের জন্য একসাথে মাঠে নেমেছে, “

জয়লক্ষ্মীর জন্য তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে পুডুকোত্তাইয়ের কালেক্টর পি উমা মহেশ্বরীও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মূলত তার অনুরোধেই ওএনজিসি কর্মীরা অল্প সময়ের মধ্যে অর্থ সংগ্রহ করে।

কালেক্টর পি উমা মহেশ্বরী বলেন, “সে একজন উজ্জ্বল এবং নিবেদিত শিক্ষার্থী । অন্য শিক্ষার্থীদেরও অনুপ্রাণিত করবে। তার গ্রেডগুলি ভাল, তবে দুর্ভাগ্যক্রমে, তার বাবা-মা তাকে সমর্থন করতে অক্ষম। আমি নিশ্চিত যে টিএনআইই-র সহায়তার ধারাবাহিকতায় প্রচুর লোকেরা তাকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসবে।”

“যারা আমাকে সাহায্য করেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি খুশি যে আমার নাসা দেখার স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্চে। আমি আশা করি অন্য মেয়েরাও আমার গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে, ”জয়লক্ষ্মী বলেছিলেন।

তার এখনও আরও ৭০ হাজার রূপি প্রয়োজন এবং ২৭ শে ডিসেম্বরের মধ্যে তাকে পুরো অর্থ প্রদান করতে হবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!