দ্রুতগতির ফ্লাইটে রেকর্ড গড়ল ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ
নিউইয়র্ক থেকে লন্ডনের ফ্লাইটে দ্রুততার রেকর্ড ভেঙ্গেছে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ। (৯ ফেব্রুয়ারি) ‘কিয়ারা’ ঝড়ের বাতাসের গতিবেগকে কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ওই ফ্লাইট পৌঁছেছে মাত্র ৪ ঘন্টা ৫৬ মিনিটে। যাত্রাপথে ওই উড়োজাহাজের গতিবেগ ঘন্টায় ৮০০ মাইলেরও বেশি থাকায় উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের মধ্যে যাত্রীবাহী কোন ফ্লাইট এমন নতুন রেকর্ড করল।
সাধারণত নিউইয়র্ক থেকে লন্ডন ফ্লাইটের সময়সীমা ৬ ঘন্টা ১৩ মিনিট। এর আগে, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ৫ ঘন্টা ১৩ মিনিটে সবচেয়ে কম সময়ে নিউইয়র্ক থেকে লন্ডন আসার রেকর্ড ছিল নরওয়েজিয়ান এয়ারলাইন্সের। বোয়িং ৭৪৭ উড়োজাহাজের আগের সেই রেকর্ড ভাঙ্গলো এবার ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ।
অনলাইন ফ্লাইট ট্র্যাকিং সাইট, ফ্লাইট রাডার টুয়েন্টিফোর জানায়, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের ফ্লাইট নম্বর BA112 জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর ছেড়ে যায় শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যে ০৬.৪৭ মিনিটে এবং রবিবার লন্ডন হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছায় স্থানীয় সময় ভোর ০৪.৪৩ মিনিটে।
শক্তিশালি জেটস্ট্রিমের কারণে ফ্লাইটটি তার নির্ধারিত সময়ের ৮০ মিনিট আগে লন্ডনে অবতরণ করেছে। প্রসঙ্গত, জেটস্ট্রিম হলো এক ধরনের বাতাসের নদী যার মাধ্যমে বাণিজ্যিক ফ্লাইটগুলো চলাচল করে থাকে।
এ ব্যাপারে সিএনএনের একজন আবহাওয়াবিদ জানিয়েছেন, স্বাভাবিক উড়োজাহাজের চেয়ে প্রায় চারগুন বেশী গতি নিয়ে ওই উড়োজাহাজ নিউইয়র্ক থেকে লন্ডনে উড়ে যায়।
তবে তিনি এও জানিয়েছেন ওই জেটস্ট্রিমের কারণে ‘কিয়ারা’ আরও শক্তিশালী হয়েছে। তার মতে, শক্তিশালী এই জেটস্ট্রিমের প্রভাবে যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড ও উত্তর ইউরোপের কিছু কিছু স্থানে দমকা হাওয়ার বেগ বেড়ে যায় এবং সমুদ্রে বড় বড় ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। যদিও বছরের এই সময়ে শক্তিশালি জেটসট্রিমের সুবিধা পাওয়ার ব্যাপারটি ফ্লাইটগুলোর জন্য স্বাভাবিক ব্যাপার। আকাশে উড়বার ক্ষেত্রে তাদের যাত্রা এসময় সাধারণ সময়ের চাইতে দ্রুতগতির বা মসৃণ হয়ে থাকে যেটি ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের এই উড়োজাহাজের ক্ষেত্রে দেখা গেছে।
নতুন এই সাবসোনিক গতির রেকর্ড নিয়ে ফ্লাইটটির যাত্রী ডেভিড রেডহিল ফেসবুক পোস্টে লিখেন, “আমরা সবেমাত্র BA112 তে চড়ে হিথ্রোয় পৌঁছেছি। ক্যাপ্টেন ঘোষণা করেছেন যে আমরা জেএফকে থেকে দ্রুততম সময়ে কোন নন-কনকর্ড ফ্লাইটে মোটে ৪ ঘন্টা ৫৬ মিনিটে এখানে অবতরণ করেছি। স্টর্ম সিয়ারা আঘাত হানার বেশ আগেই আমরা নিরাপদে অবতরণ করতে পেরেছি। খুবই মসৃণ এই অবতরণ। ওয়েল ডান বিএ!”
ফ্লাইটার্ডার টুয়েন্টিফোর জানায়, ইংল্যান্ডের বিমানসংস্থা ভার্জিন আটলান্টিকের দুটি ফ্লাইটও এই শক্তিশালি জেটস্ট্রিমের সুবিধা নিয়েছিল যদিও কয়েক মিনিটের ব্যবধানে বিট্রিশ এয়ারওয়েজের ফ্লাইটের দ্রুতগতির কাছে তারা হার মানে।
ফ্লাইটার্ডারের টুইটার পোস্টে দেখা যায়, নিউইয়র্ক থেকে লন্ডন যাওয়ার জন্য ভার্জিন আটলান্টিকের ফ্লাইট দুটি যথাক্রমে উড্ডয়নের ৪ ঘন্টা ৫৭ মিনিট পর ও ৪ ঘন্টা ৫৯ মিনিট পর হিথ্রোতে অবতরণ করে।
তবে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এবং ভার্জিন আটলান্টিকের এই তিনটি ফ্লাইটই ২০১৮ সালে নরওয়েজিয়ান এয়ারের শাটল ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনারের লন্ডন ফ্লাইটের রেকর্ড ভাঙ্গতে সক্ষম হয়েছে।
রেকর্ডভাঙ্গা দ্রুতগতির ফ্লাইটের ব্যাপারে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা সবসময়ই দ্রুততার চেয়ে যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখেন। তারপরও দক্ষ পাইলট নির্ধারিত সময়ের আগেই যাত্রীদের নিউইয়র্ক থেকে লন্ডনে পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারটি আনন্দের।
মাত্র এক মিনিটের ব্যবধানে দ্রুততম রেকর্ড করার সুযোগ হারালেও ভার্জিন আটলান্টিক এ নিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। সেটিতে তারা বলেছে,’ঝড়ের মেঘের বিপদে চড়ে ভার্জিন আটলান্টিকের নিউইয়র্ক জেএফকে থেকে লন্ডন হিথ্রোতে মোটে চার ঘন্টা ৫৭ মিনিটে। এটি সাধারণত প্রায় সাড়ে ছয় ঘন্টা সময় নিয়ে থাকে। দ্রুততম এই ফ্লাইটে চড়ে যাত্রীরা এক ঘন্টারও বেশি সময় আগে গন্তব্যে নিয়ে আসে। ক্যাপ্টেন ক্রিস পোহল দীর্ঘ উচ্চতার ২৩০ নটের বাতাসের স্রোতকে কাজে লাগিয়ে আমাদের A350-1000 উড়োজাহাজটিকে সর্বোচ্চ ৭২৪ নট গতিতে এবং গড়ে ৬২৫ নট গতিতে পরিচালনা করে।’
ভার্জিন আটলান্টিক তাদের বিবৃতিতে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের কাছে এক মিনিটে রেকর্ড হারানোর বিষয়টি উল্লেখ করে। তবে এই রেকর্ডে হারার জন্য তারা ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের ৭৪৭ টি দ্বিগুণ শক্তিতে ইঞ্জিনের ব্যবহার ও দ্বিগুণ জ্বালানি পোড়ানোর কথা তুলে ধরে।