জো বাইডেন : প্রেরণায় ছিল জিল ও বারাক ওবামা

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬ তম প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সংগ্রামী এই মানুষের জীবনের গল্প অনেকটা ফিনিক্স পাখির মতো বারবার ফিরে আসার ঘটনার মতো। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এখন পর্যন্ত দুবার ব্যর্থ হলেও জীবনের কাছে হার মানেননি কখনোই।

প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন পোঁড় খাওয়া জীবন যুদ্ধে হার না মানা ৭৭ বছর বয়সী জো বাইডেন।

তার আগে ১৯৭৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে ডেলওয়ার থেকে সিনেটর নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। তবে জীবনে সফলতার পাশাপাশি পারিবারিক বেশ কিছু ধাক্কা সামলাতে হয়েছে তাকে।
ডেইলি মেইল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ১৯৬৬ সালে নেইলিয়া হান্টারের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন বাইডেন। পরে সেই নারীর গর্ভে জন্ম নেয় বাইডেনের তিন সন্তান। কিন্তু তৃতীয় সন্তান জন্মের মাত্র এক বছর পর ঘটে যায় ভয়াবহ ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় বাইডেনের স্ত্রী ও কন্যার। এরপর তিন ও চার বছরের ছেলেকে বড় করে তোলার লড়াই শুরু হয় বাইডেনের। এরপর ১৯৭৭ সালে এসে জিল বাইডেনের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় জো বাইডেনের।

Travelion – Mobile

জিল আগে বিয়ে করেছিলেন। ২৪ বছর বয়সে সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটে। সে কারণে এমন কাউকে খুঁজছিলেন, যার হাত আর কখনো ছাড়তে হবে না। জিল পরে বলেছেন, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জো বাইডেনের সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ভুল করেননি। তাদের সন্তানরা আবারও মাকে হারাবে না। বিয়ের পর বাইডেনের ছেলেদের নিজের গর্ভের সন্তানের মতো করেই দেখেছেন জিল বাইডেন। পরে তাদের সংসারে মেয়ে অ্যাশলের জন্ম হয় ১৯৮১ সালে।

বারাক ওবামার সময় জো বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার ফলে আট বছর ধরে মার্কিন সেকেন্ড লেডি হিসেবে সম্মান পেয়েছেন জিল বাইডেন। ২০১৫ সালে এসে বাইডেনের এক ছেলে মারা যায়। সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠলেও সন্তানের সমাধিতে মাঝে মাঝেই ছুটে যান বাইডেন।যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে পঞ্চম সর্বকনিষ্ঠ সিনেটর এবং ডেলওয়্যার রাজ্যের সবচেয়ে বেশিদিন সিনেটর থাকা মানুষটি জো বাইডেন।

১৯৮৭ ও ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্টের জন্য লড়েছিলেন বাইডেন। প্রথমবার বুঝতে পেরেছিলেন বড্ড নবীন তিনি। তাই সরে গিয়েছিলেন নিজেই। আর ২০০৮ সালে প্রাইমারিসে ডেমোক্র্যাটদের চূড়ান্ত এবং পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট বনে যাওয়া বারাক ওবামার কাছে হার মেনেছিলেন তিনি।

২০০৮ সালে ওবামার “Change We Need” শ্লোগানের ব্যাপক জনপ্রিয়তার কাছে ভাটা না পড়লে হয়ত সেবারই প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন। বাইডেনের সেই রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ছিল। বারাক ওবামা সেটি জানতেন। তাই ওবামার দীর্ঘ ৮ বছরের প্রেসিডেন্সিতে জো বাইডেনই ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে।

জো বাইডেন সে দায়িত্ব বেশ ভালভাবেই পালন করেছিলেন। বারাক ওবামা এক ভাষণে বলেছিলেন, বাইডেনের সাথে তার কেমিষ্ট্রি ছিল প্রেসিডেন্ট জীবনের বড় সম্বল। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সম্মান হিসেবে ২০১৭ সালে বাইডেন পেয়েছিলেন প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম।

বলাবাহুল্য, বাইডেনের চেয়ে বয়সে জুনিয়র জর্জ ডব্লিউ বুশ (৭৪ বছর), বারাক ওবামা ৫৯ বছর এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প (৭৪ বছর), মার্কিন মুলুকের প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করেছেন, লড়াইয়ে জিতেছেন ৭৭ বছর বয়সী জো বাইডেন। স্বপ্ন পূরণের জন্য তিনি নির্ঘুম ছিলেন।

প্রেসিডেন্ট তিনি হবেনই-এমন অদম্য ইচ্ছা, এই অদম্য ইচ্ছাই হার না মানা, হাল না ছাড়া, লক্ষ্যর পেছনে পড়ে থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতলেন।উল্লেখ্য, কৃতজ্ঞপূর্ণ এই মহান মানুষ জনসম্মুখে বলেছিলেন,
আমি বারাক ওবামার মতো এমন একজন মহান ব্যক্তির সংস্পর্শে ৮ বছর পাশাপাশি থেকে উপ রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পেরে নিজেকে অনে সম্মানিতবোধ করছি। একই সাথে বারাক ওবামাও বাইডেনের জন্য ভোট চেয়েছেন অকৃপণভাবে।

সূত্র : ইনসাইডার ডেইলি মেইল,টেলিগ্রাফ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!