কাতারে কাফালা পরিবর্তন, বাংলাদেশিদের ভাগ্য খোলার সম্ভাবনা

শ্রম আইন পরিবর্তন করেছে কাতার, যেখানে বাতিল করা হয়েছে বহুল আলোচিত কর্মসংস্থানব্যবস্থা ‘কাফালা’। এ ছাড়া দেশটিতে শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি এক হাজার কাতারি রিয়াল, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৩ হাজার টাকার বেশি, নির্ধারণের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। শ্রম আইনে পরিবর্তনের কথা গত বছরই জানিয়েছিল কাতার।

কাফলা বাতিলের প্রেক্ষিতে অভিবাসী শ্রমিকেরা তাঁদের বর্তমান স্পন্সর বা নিয়োগকর্তাদের অনুমতি না নিয়েই চুক্তি শেষ হওয়ার আগে চাকরি পরিবর্তন করতে পারবেন। তবে নিয়োগকর্তারা চাইলে ‘পলাতক’ কর্মীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ করতে পারবেন। এ ছাড়া ন্যূনতম মজুরি বিধিমালার ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তাদের শ্রমিকদের জন্য আবাসন ও খাবারের জন্য ভাতা প্রদান করতে হবে। এত দিন ধরে চলা কাফালার নিয়মমতে, কোনো শ্রমিক বা কর্মী অন্য কাজে যোগ দিতে চাইলে তাঁকে তাঁর উচ্চপদস্থ কর্মী বা সংস্থার অনুমতি নিতে হতো। দীর্ঘদিন ধরে চালু থাকা সেই নিয়মের এবার অবলুপ্তি ঘটল। ফলে চাকরি ছেড়ে ক্ষেত্রে আলাদা করে অনুমতির প্রয়োজন হবে না।

আইএলও বলছে, এ পদ্ধতি বাতিল হওয়ায় প্রবাসী কর্মীরা নিজের ইচ্ছানুযায়ী কফিল (নিয়োগকর্তা) পরিবর্তন ও দেশে আসা-যাওয়া করতে পারবেন এবং কর্মসংস্থান চুক্তিতে নির্ধারিত শর্ত অনুযায়ী চলাচলের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা পাবেন। তবে আইনটি কার্যকর হতে কমপক্ষে আরও ছয় মাস সময় লাগবে।

Travelion – Mobile

কাতারে থাকা ও খাওয়ার জন্য আগে কর্মীদের যে বেতন দেওয়া হতো, তা ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে নতুন নিয়মে। ন্যূনতম বেতন হবে এক হাজার কাতারি রিয়াল। ফলে শ্রমিকদের আয় অনেকটাই বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

কাতারের শ্রম ও সামাজিক বিষয়ক মন্ত্রী ইউসুফ মোহাম্মদ আল ওথমান ফাখরুও বলেন, এই নতুন আইন একটি বড় মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এতে শ্রমিক, নিয়োগকারী ও দেশ একইভাবে উপকৃত হবে।

কাফালার পরিবর্তনের প্রসঙ্গে ন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা- আইএলওর মহাপরিচালক গাই রাইডার বলেন, এই উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে কাতার কিছু প্রতিশ্রুতি দিল। শ্রমিকদের আরও বেশি স্বাধীনতা, সুরক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি নিয়োগকর্তাদের বদলে ফেলার স্বাধীনতাও পেলেন কর্মীরা।

এ পদক্ষেপের প্রশংসা করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, কাতার অভিবাসী কর্মীদের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। এটি উৎসাহজনক লক্ষণ যে শেষ পর্যন্ত কাতার সঠিক পথে চলছে। সংস্থাটির অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার বিভাগের প্রধান স্টিভ ককবার্ন বলেন, “সত্যিকার অর্থে শ্রমিকদের ন্যায়বিচারের জন্য দরকার ছিল। নিয়মিত পর্যালোচনা করে কর্মীদের মজুরি ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।”

বিশ্বের সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয়ের সুবিধা উপভোগ করা কাতার কাতার হচ্ছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় শীর্ষ শ্রমবাজার। দেশটিতে বাংলাদেশের চার লাখের বেশি কর্মী কাজ করেন । তাই কাফালা পদ্ধতি বাতিল এবং বেতন ও সুযোগ–সুবিধা বাড়লে পেলে সকলই উপকৃত হবেন।

এ ছাড়া ২০২২ বিশ্বকাপের জন্য স্টেডিয়াম তৈরির কাজে যুক্ত শ্রমিক ও কর্মীদের চাহিদা বাড়ার সুযোগসহ নানা সুযোগ বাংলাদেশিরা নিতে পারবেন। ২০ লাখের বেশি অভিবাসী কর্মী সেখানে কাজ করছেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!