ওমানের পাহাড়ে পাহাড়ে রত্নপাথরের খোঁজে অভিযাত্রী লোকমান

ওমানের তরুণ পর্বতারোহী লোকমান শুধু পাহাড়ে হাইকিং করতেই ভালোবাসেন না, পাহাড়ের গভীরে লুকিয়ে থাকা ভূতাত্ত্বিক সোনার খোঁজেও ব্যস্ত থাকেন ।

কুরিয়াতের রুক্ষ পাহাড় আর হাইকিং, ওমানের তরুণ অভিযাত্রী লোকমান সাঈদ আল হুতি ভালোবাসার জায়গা, আর সেই ভালবাসা তাকে এমন একটি জগতে নিয়ে গেছে, যেখানে ওমানের খুব কম মানুষই পা রেখেছেন — সমৃদ্ধ ও অপ্রকাশিত রত্নপাথরের রহস্যময় জগৎ ।

“হাইকিং করার সময় আমার মনে হতো, আমাদের পায়ের নিচে কি মূল্যবান পাথর থাকতে পারে?” — বলছিলেন লোকমান স্থানিয সংবাদমাধ্যমে। “যদি থাকে, তাহলে কেউ সেগুলো নিয়ে গবেষণা বা আলোচনা করে না কেন?”

এই কৌতূহলই তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ২০১৫ সালে তিনি কুরিয়াত অঞ্চলে শুরু করেন নিজের প্রথম রত্ন অনুসন্ধান অভিযান। সে যাত্রায় আবিষ্কার করেন ভূতাত্ত্বিক সোনা। এরপর থেকেই রত্নবিদ্যা নিয়ে তার গভীর অধ্যয়ন শুরু।

Travelion – Mobile

লোকমান বলেন, “আমি নানা ধরনের মূল্যবান ও আধা-মূল্যবান পাথর চিহ্নিত করতে পেরেছি — যেমন অ্যাগেট, অ্যামেথিস্ট, সিট্রিন, ট্যুরমালাইন, অ্যাকোয়ামেরিন, ওপাল ও ফিরোজা।”

তিনি ব্যাখ্যা করেন, “মূল্যবান পাথরের মধ্যে পড়ে হীরা, পান্না, নীলকান্তমণি আর রুবি। আর আধা-মূল্যবান পাথরের মধ্যে আছে অ্যামেথিস্ট, ফিরোজা, মালাকাইট, ওপাল প্রভৃতি।”

তবে লোকমানের জন্য এসব পাথরের প্রতি ভালোবাসা কেবল তাদের আর্থিক মূল্যের জন্য নয়, বরং নিজ হাতে খুঁজে পাওয়ার আনন্দই তার কাছে বড়।

“আমার নিজের হাতে একটি স্বচ্ছ কোয়ার্টজ স্ফটিক আবিষ্কার ছিল আমার জীবনের এক অসাধারণ মুহূর্ত।”

Diamond-Cement-mobile

সেই থেকেই শুরু, এরপর তিনি ইনস্টাগ্রামে তার পাথরের ছবি ও তথ্য পোস্ট করতে থাকেন। এক সময় অনুসারীরা তাকে পাথর কিনতে অনুরোধ করতে শুরু করে। প্রথমে কাঁচা পাথর বিক্রি করলেও পরে ভাবলেন — এগুলো দিয়ে গহনা তৈরি করাই যায়!

তিনি বলেন, “আমি রূপা ও সোনা দিয়ে গহনা ডিজাইন করা শুরু করি, যেখানে ওমানের রত্নপাথর ব্যবহার করি। সাড়া ছিল অভাবনীয়।” নিজের হাতে স্কেচ করে গহনার নকশা তৈরি করেন তিনি। এরপর গড়ে তোলেন নিজস্ব কর্মশালা, শেখেন ডিজিটাল ডিজাইন এবং গড়ে তোলেন একটি ছোট ব্যবসা।

লোকমান বলেন, “ওমানে রত্ন অনুসন্ধানী খুব কম, তাই সচেতনতাও কম। অথচ ভারত ও থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলো রত্নপাথরের প্রদর্শনী ও গবেষণায় অনেক এগিয়ে।”

তিনি তার ইনস্টাগ্রামকে শিক্ষা প্ল্যাটফর্মে পরিণত করেছেন, যেখানে তিনি অনুসন্ধানের ভিডিও, পাথর শনাক্তকরণের পদ্ধতি এবং সংরক্ষণের কৌশল শেয়ার করেন।

তার লক্ষ্য — ওমানি রত্নপাথর নিয়ে একটি মানসম্পন্ন বই লেখা, যা একদিন রেফারেন্স হিসেবে বিবেচিত হবে। আর স্বপ্ন? “ওমানে রুবি, হীরা, পান্নার খোঁজ এবং বিশ্বব্যাপী ওমানি পাথরের প্রচার নিয়ে একটি বিলাসবহুল গহনার ব্র্যান্ড চালু করা।”

লোকমমানের ভাষায়, “বিশ্বকে জানাতে চাই, আমাদের শুধু তেল আর ইতিহাসই নেই, আমাদের আছে প্রকৃতির গড়া নিজস্ব সৌন্দর্য – রত্নপাথর।”

সব খবর জানতে, এখানে ক্লিক করে আকাশযাত্রার ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকার অনুরোধ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!