এশিয়া থেকে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকাগামী ফ্লাইটগুলোর জন্য ইরানের আকাশপথ ছিল সবচেয়ে সহজ, সময় ও জ্বালানি সাশ্রয়ী একটি রুট—যা ‘ইরান করিডর’ নামে পরিচিত। প্রতিদিন গড়ে ১,৪০০টি ফ্লাইট এই রুট ব্যবহার করত। কিন্তু ১৩ জুন থেকে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার কারণে এই করিডর পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে তেহরান।
এর ফলে বহু ফ্লাইট বাতিল হয়েছে, আবার অনেককে বিকল্প রুটে যেতে হচ্ছে। ফলে প্রতিটি ফ্লাইটকে ৫০০ থেকে ১,৫০০ কিলোমিটার বেশি পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে এবং ৩০ মিনিট থেকে ২ ঘণ্টা পর্যন্ত বেশি সময় লাগছে। এতে জ্বালানি খরচ বেড়েছে, যা শেষ পর্যন্ত যাত্রীদের গাঁটের টাকায়ই পড়ছে।
এভিয়েশন খাতের অভিজ্ঞ কর্মকর্তা ইখতিয়ার ইসলাম উদাহরণ টেনে বলেন, “আজ আমাদের একজন যাত্রী ইস্তানবুল যাওয়ার জন্য তার্কিশ এয়ারলাইন্সে ৫০০ কিমি বাড়তি পথ পাড়ি দিয়েছেন। আবার সিলেট থেকে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে যাওয়ার জন্য এক যাত্রীর ৮৮০ কিমি অতিরিক্ত ফ্লাইট ছিল। এতে জ্বালানি খরচ বেড়েছে, আর যুদ্ধের কারণে ফুয়েলের দামও উঁচু। এমনকি ইরান থেকে সস্তায় জ্বালানি নেওয়ার সুবিধাটিও এখন আর নেই।”ইরান করিডর বন্ধ হওয়ায় এখন প্রতিদিন কমপক্ষে ১৪ কোটি টাকার ওভারফ্লাইট ফি হারাচ্ছে দেশটি। প্রতিটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ইরানের আকাশ ব্যবহার করত এবং গড়ে ৮০০ মার্কিন ডলার করে ফি দিত। হিসাব অনুযায়ী, চার দিনে প্রায় ৫৬ কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে ইরান। মাসজুড়ে এই ক্ষতি ছাড়িয়ে যেতে পারে ১,৭০০ কোটি টাকার বেশি।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ফ্লাইটগুলো ভারত ও পাকিস্তান হয়ে ‘ইরান করিডর’ ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যের আকাশপথ হয়ে ইউরোপ ও আমেরিকায় যেত। সাধারণত কাতারের দোহা,আমিরাতের দুবাই, ইরানের তেহরান, তুরস্কের ইস্তানবুল রুট ধরতো ফ্লাইটগুলো। আবার কিছু ফ্লাইট আজারবাইজান/আর্মেনিয়ার মতো ককেশাস অঞ্চলের দেশগুলোর উপর দিয়ে ইউরোপের দিকে এগিয়ে যেত।
কিন্তু এখন সেগুলো ইরানকে এড়িয়ে সৌদি আরব, মিশর ও সুদানের আকাশ দিয়ে লোহিত সাগর ও ভূমধ্যসাগরের উপর দিয়ে ইউরোপে যাচ্ছে। এটি বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত বিকল্প। কিছু ফ্লাইট আবার পূর্ব এশিয়া থেকে তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান হয়ে জর্জিয়া ও আজারবাইজান হয়ে তুরস্কের আকাশপথ ব্যবহার করছে।
ফলে সবচেয়ে লাভবান হচ্ছে সৌদি আরব, মিশর, তুরস্ক। আগে এই ফ্লাইটগুলো সৌদি আরব, মিশর, তুরস্ক দিয়ে যেতো না।
বাংলাদেশি এয়ারলাইনসের এক সিনিয়র পাইলট বলেন, যদিও জর্ডান, লেবানন এবং সিরিয়া তাদের আকাশপথ ব্যবহারে ছাড় দিয়েছে, তবুও নিরাপত্তাজনিত কারণে কোনো আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন এখনও ইরান করিডরে ফিরছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যতদিন আকাশ নিরাপদ না হয়, ততদিন তারা ইরান করিডর ব্যবহার করবে না।
সব খবর জানতে, এখানে ক্লিক করে আকাশযাত্রার ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকার অনুরোধ